ধরা খেলেন কোটিপতি পিওন ও তার স্ত্রী
নড়াইলের কালিয়ার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহায়ক কোটিপতি পিয়ন হিসেবে পরিচিত মো. তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মিসেস নাসরিন বেগমের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
যশোর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত নড়াইলের অধীনে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং’র দায়ে মামলাটি করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোড়ল।
অভিযুক্ত মো. তরিকুল ইসলাম কালিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহায়ক। বর্তমানে তিনি নড়াইল সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত।
তিনি নড়াইলের নড়াগাতী থানার গাছবাড়িয়া গ্রামের শাহাদাৎ মুন্সির ছেলে। নড়াইল পৌরসভার ভাদুলীডাঙ্গায় স্ত্রীর নামে জমি কিনে সেখানে আলীশান বাড়ি করে বসবাস করছেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আসামি মো. তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মিসেস নাসরিন বেগম পরস্পরের সহায়তায় ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে স্থানান্তর ও রূপান্তর করে তা দুদকে গোপন করে দখলে রাখার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ধারাসহ দঃ বিঃ ১০৯ ধারায় এ মামলা হয়।’
দুদকের তদন্তকালে ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন, যশোরের উপ-পরিচালকের মাধ্যমে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো সম্পদ বিবরণীতে তরিকুল ইসলাম তার নিজ নামে ১০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ দেখান। তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল স্ত্রী নাসরিন বেগমের নামে নড়াইল পৌরসভার ৬৭নং ভাদুলীডাঙ্গা মৌজায় ২৮০ নং দাগে ২০১ নং খতিয়ানে ১৪ শতক জমি ক্রয়মূল্য বাবদ ৮ লাখ টাকা, ওই জমির ওপর ভবন নির্মাণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকার সম্পদসহ ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেখিয়েছেন।
এ সময় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার দেনা আছে বলে দুদকের কাছে হিসাব দেখান। দেনার টাকা বাদ দিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ টাকা।
কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সৌরভ দাস ও সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে তদন্তে মাঠে নামেন। তদন্তকালে ৫৫ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৩ টাকার সম্পদের হিসাব পান তরিকুল ও তার স্ত্রীর নামে। ওই টাকা থেকে দেনা দেখানো ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাদ দিয়ে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকা।
সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল জানান, অসুসন্ধানে প্রাপ্ত সম্পদের ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকা থেকে তাদের দুদকে দেয়া সম্পদের হিসাব ৩১ লাখ টাকা বাদ দিলে জ্ঞাত আয় হির্ভূত ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার সম্পদের হিসাব গোপন করেছেন।
অফিস সহায়ক তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নাসরিন বেগম পেশায় একজন গৃহিণী এবং তার স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এসব সম্পদ তরিকুল ইসলাম তার স্ত্রীর নামে জমা করেছেন এবং দুদকের কাছে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার হিসাব গোপন করেছেন।
২০০১ থেকে ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত আসামি মো. তরিকুল ইসলাম জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে তা দিয়ে তার ওপর নির্ভরশীল তার স্ত্রী নাসরিন বেগমের নামে সম্পদ অর্জন করেন এবং নাসরিন বেগম ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার সম্পদ গোপন করে ও তা দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, দুদকের এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এই মামলাসহ নড়াইলের অন্য মামলাগুলোর যাতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হয় সেই প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি বিভিন্ন দফতরের অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে দুদক কাজ করবে বলে আশা করি।
উল্লেখ্য, তরিকুল ইসলাম ২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নড়াইল জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে নাইটগার্ড পদে যোগদান করেন। এরপর ২০০৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পিয়ন পদে পদোন্নতি পান। একই পদে ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কালিয়ায় বদলি হন। কালিয়া অফিসে যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় তরিকুলের অবৈধ আয় বাণিজ্য।
হাফিজুল নিলু/এফএ/জেআইএম