নদীতে চলে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের ভানু মল্লিকের কান্দি গ্রামে অবস্থিত কাজিয়ার চর ছমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টিতে সাড়ে ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। পাশাপাশি ৯নং কাজিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪২ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টিতে ৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে এবার একেবারে বিদ্যালয় দুটির কিনারে এসে ঠেকেছে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঠিকাদারের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ১৫ হাজার বালুর বস্তা (জিওব্যাগ) ফেলা হচ্ছে। নদীঘেঁষে ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে চারতলা ফাউন্ডেশনের একতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আর ১০০ হাত দূরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বালুর বস্তা দিয়েই ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তার পাশে ভানু মল্লিক কান্তি জামে মসজিদ, কাজিয়ার চর কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১৮টি দোকান নিয়ে কাজিয়ার চর বাজার ভাঙনের মুখে রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিঝুম, পারভেজ, সুলতানা ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রায়হান, বিথি জানায়, স্কুলে যাওয়া-আসার সময় ও ক্লাস করার সময় খুব ভয় লাগে। কখন আমাদের দুটি স্কুল নদীগর্ভে চলে যায়।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নোয়াব আলী মাদবর বলেন, আশপাশে তো কোনো স্কুল নেই। তাই বাধ্য হয়ে ওই স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পাঠান সবাই।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সরস্বতী রানী সাহ বলেন, আগে বিদ্যালয়ে সাড়ে তিনশ’র মতো শিক্ষার্থী ছিল। দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের নির্দেশে বিদ্যালয় রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।
কাজিয়ার চর ছমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গত বছর যখন তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয় তখন বিদ্যালয় ভেঙে যাবে ভয়ে জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন জব্বর আলী আকনকান্দি গ্রামে কাজিয়ার চর ছমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শাখা খোলা হয়। সেখানে আড়াইশ শিক্ষার্থী রয়েছে। পদ্মা নদীর পাড়ে বাকি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাঙনের মুখে রয়েছি আমরা। বর্ষা হলে চারদিকে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ না করতে পারলে বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা বিদ্যালয় দুটি রক্ষার্থে কাজ করছে। বিদ্যালয়ে এ বছর পাঠদানে কোনো সমস্যা নেই।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, বিদ্যালয় ভাঙন রোধে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০ লাখ টাকার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও ফেলা হবে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রক্ষায় মনিটরিং কমিটি কাজ করছে।
মো. ছগির হোসেন/এএম/পিআর