মান্দায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫শ পরিবার পানিবন্দি
উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নওগাঁর আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মান্দার আত্রাই নদীতে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে বিপৎসীমায় অবস্থান করলেও মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে বিপদৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচশ পরিবার।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৯টার রিডিং অনুযায়ী জেলার মান্দার আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার, ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিযে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মান্দায় আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে রাতে শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাজরভাঙা বেডিবাঁধ ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা বস্তা ও বাঁশ দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া মদনচক, উত্তর লক্ষ্মীরামপুর, বানডুবি, বাগাতিপাড়া, জোতবাজার, গোয়ালমান্দা, পারনুরুল্লাবাদ, কালিকাপুর, কামারকুড়ি, ছোটবেলালদহ, খুদিয়াডাঙ্গা, বুড়িদহ, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোকাহাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, বটতলা বাজার, দ্বারিয়াপুর বেড়িবাঁধ, খুদিয়াডাঙ্গা পূর্বপারসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছে এবং বেড়িবাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। এসব এলাকার মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নির্মাণের পর থেকে আজ পর্যন্ত আর সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে দুই ধারের মাটি সরে গিয়ে বাঁধগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এছাড়া এসব পুরাতন বাঁধে রয়েছে ইঁদুরের অসংখ্য গর্ত। নদীর পানির চাপের ফলে এসব গর্ত দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে একসময় বাঁধ ভেঙে যায়। শুষ্ক মৌসুমে এসব স্থান সংস্কার করা হলে বর্ষা মৌসুমে অনেকটাই নিরাপদে থাকতে পারতেন স্থানীয়রা।
মান্দার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধিতে সোমবার গভীর রাতে শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চকরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমধার, কয়লাবাড়ি ও বটতলা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নওগাঁর কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনও কোথায় বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটেনি। মান্দার বিষ্ণপুরে বেড়িবাঁধ ভাঙার যে ঘটনা ঘটেছে সেটা পাউবোর মধ্যে পড়ে না। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে এ বেড়িবাঁধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম মান্নান বলেন, যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের ২শ টন চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার (চাল, ডাল, চিনি, তৈল, চিড়া, মোমবাতিসহ আনুষঙ্গিক) মজুদ আছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা সব জায়গায় খোঁজ-খবর রাখছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার পানি কমতে শুরু করেছে। ওই পানি এদিকে প্রবাহিত হওয়ায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করবে।
আব্বাস আলী/এমবিআর/পিআর