পানিতে ডুবে যাওয়া চরে গরু চোর আতঙ্ক
গরু চোর আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা। চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবে রয়েছে পদ্মা পাড় এলাকা। সেই সঙ্গে পানিতে ভেসে গেছে নিম্নাঞ্চল।
এ অবস্থায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চোর-ডাকাতের সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিনিয়ত গভীর রাতে ট্রলারযোগে হানা দিচ্ছে গরুর খামারগুলোতে। গরু-ছাগল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। ফলে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা।
জানা যায়, চরাঞ্চলবাসীর একমাত্র রোজগারের অবলম্বন গবাদি পশু পালন। বিশেষ করে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করা তাদের একমাত্র রোজগারের উৎস। আর এই গবাদি পশু নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে চরবাসীর।
একদিকে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ফসলি মাঠ পানিতে ডুবে আছে। অন্যদিকে চোর- ডাকাতের সংঘবদ্ধ দল ট্রলারযোগে গভীর রাতে হানা দিচ্ছে খামারিদের ঘরে। গত কয়েকদিনে পদ্মা পাড়ের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের রহম বিশ্বাস বাড়ি, নজরুল ইসলাম বিশ্বাসের বাড়ি, চর কল্যাণপুর গ্রামের আইয়ুব শেখের বাড়ি, মধু ফকির ডাঙ্গী গ্রামের শেখ বছির উদ্দিনের বাড়ি ও খায়রুল বেপারীর বাড়িসহ বিভিন্ন কৃষক পরিবারের পালের গরু রাতের আঁধারে লুটে নিয়েছে চোরেরা।
পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা শেখ বছির বলেন, রাতের আঁধারে ট্রলারযোগে এসে আমার বাড়ি থেকে গরু লুট করে নিয়ে যায় চোরেরা। আমরা যারা চরের বাসিন্দা তাদের একমাত্র আয়ের উৎস গরু পালন। বিশেষ করে কোরবানি ঈদের আগে গরু বিক্রি করে যা রোজগার হয় তা দিয়েই আমরা সারা বছর চলি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরুগুলো কিনেছিলাম। কিন্তু সেই গরুগুলো চুরি হয়ে গেলো। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করব কীভাবে বুঝতেছি না।
চর ঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন মৃধা বলেন, পদ্মা পাড়ের বাড়িগুলোতে প্রতি রাতেই ট্রলারযোগে চোর ডাকাত হানা দেয়। গ্রামে গ্রামে আমরা রাত জেগে চোর-ডাকাত পাহারা দিচ্ছি।
চর কল্যাণপুর গ্রামে অবস্থিত গরু খামারের মালিক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এজিএম বাদল আমিন বলেন, পদ্মার চরের বাড়িগুলো এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব অনেক বেশি। তাই এক বাড়িতে চোর-ডাকাত হানা দিলে অন্য বাড়ির লোকজন টের পায় না। চরগুলোর চারদিক দিয়ে পদ্মার পানিতে বেষ্টিত। তাই এসব চরের পরিবারগুলোকে চোর ডাকাতের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে হলে নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করতে হবে।
চরভদ্রাসন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, আমি এখন পদ্মা পাড়ে অবস্থান করছি। গরু চুরি প্রতিরোধে নিয়মিত নৌ-পুলিশ টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছি। আমাদের যেহেতু পর্যাপ্ত পুলিশ নেই, তাই পদ্মা পাড়ের এলাকাগুলোতে রাতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে স্থানীয়রা টহলের ব্যবস্থা করলে সর্বাত্মক সহায়তা দেব।
এদিকে জেলার মধুখালী উপজেলায় গত জুন মাসের প্রথম থেকে জুলাই ৯ তারিখ পর্যন্ত ৪০ দিনে পৌরসভা ও উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ১৮টি বাড়িতে ৩৪ গরু চুরি এবং বাড়ি ও বাজারে নয়টি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
মধুখালী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের গোপালপুর গ্রাম ও কোরকদী গ্রাম থেকে ছয় গরু চোরকে আটক করেছে। এছাড়া পাঁচটি গরু উদ্ধার করা হয়েছে।
মধুখালী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয় গরু চোরকে আটক করা হয়েছে। এ সময় পাঁচটি গরু উদ্ধার করা হয়। এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। চোরেদের আটকে অভিযান চালানো হচ্ছে।
বি কে সিকদার সজল/এএম/পিআর