কমছে তিস্তার পানি
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ছয়দিন ধরে তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটে লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টের পানি।
শনিবার সকালে দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যায় তা কমে ৩৫ সেন্টিমিটারে নেমে এসেছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সকালে বিপৎসীমার ৫৩.১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানি সামান্য কমে সন্ধ্যায় ৫২.৯৫ সেন্টিমিটারে নেমেছে।
এদিকে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাট বাইপাস এলাকায় পানি এখনও ছুঁই ছুঁই করছে। তিস্তা পাড়ে রেড এলার্ট অব্যাহত রয়েছে। তিস্তার এমন পানি ২০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
অন্যদিকে শনিবার দুপুরে জেলার হাতীবান্ধার গড্ডিমারী মেডিকেল মোড় এলাকায় পানির তোড়ে একমাত্র পাকা সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে হাতীবান্ধা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
এছাড়া বন্যার পানিতে শ্রেণিকক্ষ ডুবে যাওয়ায় ৩৯টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
শনিবার বিকেলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার লালমনিরহাটের দোয়ানি তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাট বাইপাস পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গড্ডিমারী ইউনিয়নের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। এছাড়া হাতীবান্ধা থেকে বড়খাতার বাইপাস সড়কের তালেব মোড় ও মেডিকেল মোড়ে পাকা সড়কটি প্রায় ৫০০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ভাঙনের ফলে এরই মধ্যে ওই এলাকার ৩০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এদিকে উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত ছয়দিনের ভারী বৃষ্টি। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধেয়ে আসছে পানির স্রোত। এতে বড় সমস্যায় পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও প্রতিবন্ধীরা। চারদিকে অথৈ পানির কারণে গবাদি পশুপাখি নিয়ে অনেকটা বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা।
তিনদিন ধরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এদিকে পানিবন্দি পরিবারগুলো এখনও সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সাহায্য পায়নি। জেলার লক্ষাধিক পরিবার এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। পরিবারগুলোর মাঝে এখনও কোনো ত্রাণ বা শুকনো খাবার পৌঁছায়নি। পরিবারগুলো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার ছয়আনী গ্রামের খাদেম আলী বলেন, তিস্তার পানি গত ২০ বছর ছাড়িয়ে গেছে। এত পানি আগে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে গড্ডিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান জানান, তিনদিন ধরে এ ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে সড়ক ভেঙে হাতীবান্ধার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার ২৯টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করছে। বর্তমানে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুদিনে তিস্তার পানি সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বন্যার্ত পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
রবিউল হাসান/এমবিআর/এমকেএইচ