ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঢাকায় আনা হচ্ছে আরফিনাকে, তবে...

মাহাবুর আলম সোহাগ | প্রকাশিত: ০৭:৫১ পিএম, ১৩ জুলাই ২০১৯

পাঁচ মাস আগেও সুস্থ ছিল ১৩ বছর বয়সী আরফিনা আক্তার। হঠাৎ জ্বর থেকে এখন সে মৃত্যুপথযাত্রী। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও ঢাকায় একাধিক চিকিৎসক দেখানো হয়েছে তাকে। কিন্তু সঠিকভাবে কেউ তার রোগের বিষয়ে জানাতে পারেননি। তবে কেউ কেউ বলেছেন, আরফিনার লিভার ক্যান্সার হয়েছে।

চিকিৎসকদের মুখে এমন কথা শুনে চার মাস আগে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার করে আরফিনাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন তার দিনমজুর বাবা আশরাফুল ইসলাম। ১৬ দিন চেষ্টা করেও রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট না পেয়ে হোটেলে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়ের রোগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তিনি। এতে বাড়ি থেকে আনা সব টাকা শেষ হয়ে যায়। এরপর হতাশ হয়ে বাড়ি চলে যান তিনি। তখন থেকেই বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই পড়ে আছে আরফিনা। চিকিৎসার অভাবে দিন দিন তার বুকটা ফুলে বড় হয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ তাকে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। বসতে বা দাঁড়াতে হচ্ছে অন্যের সহযোগিতায়।

আরফিনার বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামে। তার বাবা আশরাফুল ইসলা রাস্তা মেরামতের কাজ করেন। তিন সন্তানের মধ্যে আরফিনা বড়। স্থানীয় বলরামহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সে। কিছুদিন স্কুলে যাওয়ার পর অসুস্থতার কারণে আর যাওয়া হয়নি।

Arfina

আশরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচ মাস আগে হঠাৎ একদিন জ্বর হয় আরফিনার। পরদিন তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের ডা. তোজাম্মেল হকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি জানান, লিভার টিউমার হয়েছে। এরপর তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজের ডা. মাহাবুব আলমকে দেখাতে বলেন। দুদিন পর আরফিনাকে রংপুরে নিয়ে ডা. মাহাবুব আলমকে দেখাই। তিনি দেখেই রংপুর মেডিকেলের সার্জারি বিভাগের ডা. আনোয়ার হোসেনের কাছে রেফার্ড করেন। এরপর আনোয়ার হোসেন আরফিনাকে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখানে সাতদিন ভর্তি থাকার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফার্ড করেন। এ কদিনে রংপুরে চিকিৎসা নিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। পরে টাকা না থাকায় তাকে আবার বাড়ি নিয়ে চলে আসি।

এরপর চিকিৎসা শুরু করি রংপুর মেডিকেলের ডা. জিয়া হায়দার বসুনিয়ার। তিনি প্রতি শুক্রবার ঠাকুরগাঁওয়ে রোগী দেখেন। আরফিনাকে দেখার পর তিনি দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি রাজধানীর ল্যাবএইডে মামুন আল মাহাতাব স্বপ্নীল নামে এক চিকিৎসকে দেখাতে বলেন আরফিনাকে। এর কিছুদিন পর ঢাকায় তার কাছে এলে তিনি ভর্তি হতে বলেন। সেখানে চিকিৎসা নিলে নাকি অনেক টাকা খরচ হবে; তাই আরফিনাকে ভর্তি করিনি। একটি হোটেলে উঠে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সিটের জন্য চেষ্টা করেছি। ১৬ দিনেও সিট না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে এসেছি।

তিনি বলেন, আরফিনার চিকিৎসায় এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ধার করা। বাড়িতে জমিজমা কিছু নেই। আছে শুধু ভিটে-মাটি। তাই আর মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, আরফিনাকে বাড়িতে এভাবে ফেলে রাখায় তার মামা ও খালারা তাকে ঠাকুরগাঁও নিয়ে যায়। তাদেরও আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। জানি না তারা কীভাবে চিকিৎসা করাবে।

কথা হয় আরফিনার মামা আল-আমিনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ১৪ জুলাই রোববার সকালে ট্রেনে আরফিনাকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাব। পরদিন তাকে মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নুরুজ্জামান জুয়েল।

Arfina

তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে ডা. নুরুজ্জামান জুয়েল আরফিনাকে দেখেছেন। পূর্বের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখে তিনি মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন এবং সেখানকার এক চিকিৎসককেও ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আরফিনার বিষয়টি ইতোমধ্যে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন অবগত হয়েছেন। ঢাকায় পৌঁছে তিনি যোগাযোগ করতে বলেছেন।

আল-আমিন বলেন, আরফিনার চিকিৎসায় ইতোমধ্যে ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকজন। সেই টাকা নিয়েই ঢাকা যাচ্ছি।

জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নুরুজ্জামান জুয়েল বলেন, আরফিনা লিভার ক্যান্সারের রোগী। ক্যান্সারের কারণে তার শারীরিক অবস্থা খুব নাজুক। আমি ক্যান্সার হাসপাতালের এক চিকিৎসককে বিষয়টি ফোন করে বলে দিয়েছি। তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন ইনশাল্লাহ।

আরফিনার বিষয়ে কথা হয় বলরামহাট দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অক্ষয় বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই শুনছি এবং দেখছি মেয়েটি অসুস্থ। লিভার ক্যান্সার নাকি হয়েছে? আমাদের স্কুল থেকে দুবার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা চাঁদা তুলে সহযোগিতা করেছি। তবে সেটা খুবই নগণ্য।

তিনি বলেন, মেয়েটির পরিবার খুবই গরিব। জানি না তারা ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারবে কি না। তবে সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে হয়তো সম্ভব।

এ বিষয়ে কথা বলতে জাগো নিউজ থেকে কল দেয়া হয় বোদা উপজেলার চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের কুমারপাড়া ওয়ার্ডের সদস্য জাকারিয়া ও চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেন হোসেন বাবুলকে। কিন্তু দুজনের নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে।

আরফিনার বিষয়ে জাগো নিউজ থেকে যোগাযোগ করা হয় রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আরফিনার বিষয়টি মনে পড়ছে না। তবে হয়তো পিএস বা এপিএসরা যোগাযোগ করেছে। তাছাড়া আমার এলাকার কোনো রোগী ঢাকায় এলে খুব চেষ্টা করি তাদের জন্য কিছু করার। এটি আমার লোকজনকেও বলা আছে।

তিনি বলেন, আপনি যেহেতু বিষয়টি জানালেন এখনই খোঁজ নিচ্ছি।

আরফিনার বিষয়ে কথা বলতে পারেন তার বাবা আশরাফুল ইসলাম 01798-706835 অথবা মামা আল-আমিনের 01308-882095 সঙ্গে।

এমএএস/পিআর

আরও পড়ুন