৩ ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত, শিক্ষকের স্ত্রী বললেন স্বামীর চরিত্র ভালো
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সেনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণির তিন ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সেনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম ওরফে দুখু অষ্টম শ্রেণির একাধিক ছাত্রীকে প্রেম নিবেদনসহ নানা প্রকার কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ডেকে নিয়ে বোরকার নেকাব খুলতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীকে জোর করে চুমু দেয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
ওই ছাত্রী এ ঘটনা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জানালে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে জমায়েত হয়। এ সময় প্রধান শিক্ষক লাল মুহাম্মদ তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বাধ্য করেন এবং ওই তিন ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। বিকেলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ওই শিক্ষককে মৌখিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘোষণা দেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক নজরুল ইসলাম সাত বছর আগে এই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। তার সংসারে ৫ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
শুক্রবার ভুক্তভোগী ওই তিন ছাত্রীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা সবাই সেনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ি উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামে।
বোরকার নেকার খুলতে বাধ্য করা এক ছাত্রী জানায়, বুধবার দুপুরের পর শিক্ষক নজরুল ইসলাম তাকে লাইব্রেরিতে দেখা করতে বলেন। কিন্তু সে দিন সে আর দেখা করেনি। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষক তাকে আবারও লাইব্রেরিতে ডাকেন। একপর্যায়ে সে লাইব্রেরিতে গেলে তাকে বোরকার নেকাব খুলতে বাধ্য করেন শিক্ষক নজরুল। তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন এবং মুখে চুমু দেয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি সে তাৎক্ষণিকভাবে সহপাঠীদের জানায়।
একইভাবে একই শ্রেণির আরও দুই ছাত্রী শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে। তারা জানায়, শিক্ষক নজরুল ইসলাম তাদেরও স্কুলের লাইব্রেরিতে নিয়ে গিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেন। অংকে ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ে তারা প্রথম দিকে মুখ খোলেনি।
এক ছাত্রীর অভিভাবক জানান, তিনি সাত সন্তানের বাবা। তার পাঁচ মেয়ে। কাউকে তিনি স্কুলে পড়াতে পাড়েননি। সবচেয়ে ছোট মেয়েটি নিজের চেষ্টায় বড় স্কুল (মাধ্যমিক) পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু লম্পট শিক্ষক নজরুলের কারণে তার মেয়ে আর স্কুলে যেতে চাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার স্ত্রী (সাবেক ছাত্রী) বৃষ্টি খাতুন বলেন, আমার স্বামীর চরিত্র খারাপ নয়। এগুলো সব ষড়যন্ত্র।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি উত্তম কুমার সাহা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে সাধারণ সভা ডেকে তার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাজমুল হক বলেন, কেউ আমাকে এখনো এ বিষয়ে জানায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আল-মামুন সাগর/আরএআর/পিআর