যশোরে পুলিশে চাকরিপ্রাপ্তরা অধিকাংশই শ্রমজীবীর সন্তান
যশোরের উপশহর এলাকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর ছেলে রায়হান ইসলাম। বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর হলো। চাকরির জন্যে রায়হান দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েছে। কিন্তু চাকরি মেলেনি। অবশেষে কোনো তদবির ছাড়াই পুলিশ কনস্টেবল পদে তার চাকরি হয়েছে।
আগের সংবাদটি পড়ুন : পুলিশে নিয়োগ পাওয়ার আগেই চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা
যশোরের কেশবপুরের গৌরিঘোনা গ্রামের হাবিবুল বাশার সুমন খুলনা বিএল কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন। নিজের লেখাপড়া ও জীবিকার তাগিদে তিনি মাসের পনের দিন রাজমিস্ত্রির জোগালের কাজ করতেন। পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে সুমনেরও। অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত সুমন বললেন, কোথাও টাকা পয়সা দেয়ার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হয়েছে বলেই তার চাকরি হয়েছে। চাকরি পেতে ১০৩ টাকা খরচ হয়েছে।
শুধু রায়হান বা সুমন নন, এমন অনেকেই আবেগাপ্লুত অভিব্যক্তি ব্যক্ত করলেন গণমাধ্যমের সামনে। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপারের আয়োজনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত এ কনস্টেবলরা তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময়ের শুরুতেই পুলিশ সুপার সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
মতবিনিময়কালে পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, এ বছর অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কনস্টেবল পদে ১৯৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অপেক্ষমান আছেন আরও ৩০ জন। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক, ভ্যানচালক, নরসুন্দরসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সন্তান। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারা নিয়োগ পেয়েছেন।
মতবিনিময়কালে পুলিশ সুপার আরও জানান, যশোর পুলিশ লাইন্সে গত ২২ জুন’১৯ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য ১ হাজার ৯৫০ জন শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১ হাজার ৬৯ জন। উত্তীর্ণরা ২৪ জুন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন এবং পাস করেন ৩৫৪ জন। ২৬ জুন মৌখিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এদের মধ্যে থেকে ২২৩ জন চূড়ান্তভাবে মনোনীত হন। এদের মধ্যে ১৯৩ জনকে প্রাথমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে ও ৩০ জনকে অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। প্রাথমিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ১১৬ জন পুরুষ, ৫০ জন নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৩ জন ও পুলিশ পোষ্য কোটায় ৪ জন।
অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার মঈনুল হক আরও বলেন, অতীতের কোনো কোনো সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে মহা পুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে শতভাগ মেধাবি ও যোগ্যরাই এবার চাকরি পেয়েছেন।
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন শিকদার, গোলাম রব্বানী, জামাল আল নাসের, অপু রায়হান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব হাসান প্রমুখ।
মিলন রহমান/এমএএস/এমএস