মুক্তি পেয়েই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে ঢাকার উদ্দেশে রানা
প্রায় চার বছর কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্ত হয়েছেন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে দুই দফায় নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা। মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আমানুর রহমান খান রানা ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার জন্য সরাসরি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
এর আগে তার মুক্তির সময় টাঙ্গাইল কারাগার গেটে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। পুলিশ ও কারারক্ষীরা কারাগারের আশপাশে কাউকে ভিড় করতে দেয়নি। তবে সকাল থেকেই রানার কর্মী ও সমর্থকরা কারাগার গেটে ভিড় জমায়। এ সময় কারারক্ষী ও পুলিশ তাদের দূরে সরিয়ে দেয়।
মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর গত ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন সাবেক এমপি রানা। তবে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর বেশ কয়েক দফায় উচ্চ আদালত ও নিন্ম-আদালতে আবেদন করেও জামিন পাননি তিনি।
অবশেষে গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় রানাকে হাইকোর্টের দেয়া স্থায়ী জামিন বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অপরদিকে জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল খারিজ করেন আদালত। এরই মধ্য দিয়ে কারা মুক্তির সকল বাধা মুক্ত হন তিনি।
পরে টাঙ্গাইল কারাগারের জেলার আবুল বাশার হাইকোর্টের জামিননামা পাওয়ার পর আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন রানা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এ মামলা তদন্ত করে এবং ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এমপি রানা ও তার তিন ভাইসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
দীর্ঘ ২২ মাস পলাতক থাকার পর এমপি রানা গত ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ওই আদালতেই আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এছাড়াও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা শামীম ও মামুন ২০১২ সালের ১৬ জুলাই বাড়ি থেকে টাঙ্গাইল শহরে এসে নিখোঁজ হন। ঘটনার পরদিন শামীমের মা আছিয়া খাতুন টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। একবছর পর ২০১৩ সালের ৯ জুলাই নিখোঁজ মামুনের বাবা টাঙ্গাইল আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত করে পুলিশ ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি তালিকাভুক্ত করে।
ওই মামলায় গ্রেফতার হওয়া খন্দকার জাহিদ, শাহাদত হোসেন এবং হিরন মিয়া আদালতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তারা বলেন, এমপি রানার নির্দেশে যুবলীগ নেতা শামীম ও মামুনকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/এমকেএইচ