জেলা প্রশাসকের কথা শুনে কাঁদলেন ৮০ বছরের সেই বৃদ্ধা
৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে মারপিটের ঘটনায় ছোট ছেলে অভিযুক্ত ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের রৌশনাবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শনিবার রাতে নির্যাতিত বৃদ্ধা মা বাদী হয়ে ছোট ছেলে ফারুক হোসেন, তার স্ত্রী ইনসানা বেগম এবং নাতি হৃদয়ের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেন।
জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি জানতে পারেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন। রোববার দুপুরে তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধা মাকে দেখতে যান। নিজের ছেলে ও পুত্রবধূর নির্যাতনের কথা জেলা প্রশাসককে বলে কেঁদে ফেলেন এই বৃদ্ধা মা।
এ সময় চিকিৎকদের কাছে বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন জেলা প্রশাসক। সেই সঙ্গে বৃদ্ধার চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেন তিনি। পাশাপাশি অভিযুক্ত ছেলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বৃদ্ধা মাকে বলেন, আপনার এক ছেলে বের করে দিয়েছে তো কি হয়েছে, আমরা সবাই আপনার পাশে আছি মা। জেলা প্রশাসকের এমন কথা শুনে আবেগে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা মা।
সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ছেলে ফারুক হোসেনসহ পুত্রবধূ ইনসানার বিচার দাবি করেন বৃদ্ধা। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এহেতেশাম রেজা, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রতীক কুমার বণিক উপস্থিত ছিলেন।
স্বামীর ভিটাবাড়ি ছেড়ে অন্য ছেলের বাড়ি না যাওয়ায় শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনয়িনের গলেহা ফুলপাড়া এলাকায় ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা হাফেজা খাতুনকে তার ছোট ছেলে ফারুক হোসেন (৪০), পুত্রবধূ ইনসানা (৩২) এবং নাতি হৃদয় (২১) মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিকেলে বৃদ্ধার মেজো ছেলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসারত বৃদ্ধা হাফেজা খাতুন জেলা প্রশাসককে বলেন, ছোট পুত্রবধূ ইনসানা আমার টয়লেটে যাওয়ার পানির বদনায় মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে রেখেছিল। সামান্য কারণে আমার বুকে তিনটি ঘুষি মেরেছে। ছোট ছেলে ফারুক আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল। এর আগে নাতি হৃদয় আমার কুঁড়েঘরের চালা ভেঙে দেয়। তারা দীর্ঘদিন থেকে আমাকে নির্যাতন করে। আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রতীক কুমার বণিক বলেন, ভর্তির পর থেকে বৃদ্ধাকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের এসআই মো. শাহিন বলেন, শনিবার রাতে ছেলে এবং পুত্রবধূসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগে মামলা দিয়েছেন বৃদ্ধা। রোববার দুপুরে অভিযুক্ত ছেলে ফারুক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১২ বছর আগে স্বামী হারান বৃদ্ধা হাফেজা খাতুন। স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে ভিটাবাড়িতে একাই থাকেন তিনি। একই বাড়িতে ছোট ছেলে পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও বৃদ্ধা মা প্রতিদিনের খাবার খেতেন পাশের আরেক ছেলের বাড়িতে। পাঁচ ছেলে এবং পাঁচ মেয়ের জননী হাফেজা খাতুন সবার বিয়ে দিয়েছেন। অন্য ছেলে এবং মেয়েরা মাকে তাদের বাড়ি নিতে চাইলেও স্বামীর ভিটা ছেড়ে যেতে রাজি হননি। ছোট ছেলে ফারুক হোসেনের ঘরঘেঁষে স্বামীর ভিটায় ঝুপড়ি ঘর করে একাই থাকেন হাফেজা। খাওয়া-দাওয়া করেন মেজো ছেলে শফিউল্লাহর বাড়িতে। তবে ছোট ছেলে ও তার স্ত্রী ঝুপড়ি ঘরটি দখলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধা মাকে মারপিটসহ নানাভাবে নির্যাতন করছেন।
শনিবার দুপুরে বৃদ্ধার টয়লেট যাওয়ার রাস্তায় আবর্জনা জড়ো করে রেখে দেন ফারুকের স্ত্রী ইনসানা বেগম। বৃদ্ধা কষ্ট করে ওই আবর্জনা সরিয়ে নেন। এ নিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে রাগ করেন পুত্রবধূ। পরে টয়লেটে যাওয়ার সময় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃদ্ধার হাত থেকে পানিভর্তি বদনা নিয়ে ভেঙে ফেলেন পুত্রবধূ ইনসানা। একপর্যায়ে ছেলে ফারুকের উপস্থিতিে স্ত্রী ইনসানা বৃদ্ধার বুকে ঘুষি মারেন। এ সময় বৃদ্ধার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ছেলে শফিউল্লাহ মাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সফিকুল আলম/এএম/এমএস