ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

তলিয়ে যেতে পারে জয়পুরহাটের শত শত বাড়িঘর

জেলা প্রতিনিধি | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ১১:২৭ এএম, ০৭ জুলাই ২০১৯

উত্তর জনপদের ছোট্ট জেলা জয়পুরহাটের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে মোট ১৩৩ কি. মি. দীর্ঘ চার নদী ছোট যমুনা (৩৮ কি. মি.), তুলসীগঙ্গা (৫১ কি. মি.), হারাবতী ২৩ (কি. মি.) এবং চিরি (২১ কি. মি.)। এর মধ্যে হারাবতী ও চিরি নদীতে ঝুঁকি না থাকলেও ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গার ঝুঁকির কারণে এই দুই নদীর উভয় তীরে বন্যা প্রতিরোধ ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬২ কি. মি. বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে বন্যার হাত থেকে ফসল ও সাধারণ মানুষকে রক্ষার লক্ষ্যে ছোট যমুনা ও তুলশীগঙ্গা নদীর বাঁধের উভয় তীরে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৪৭টি স্লুইসগেট ও রেগুলেটর স্থাপন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

কিন্তু তাদের উদাসীনতা, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব স্লুইসগেটের সেড, পিনিয়ামসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। ফলে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে অকেজো ছিল। গত অর্থ বছরে এ রকম ২৫টি অকেজো স্লুইসগেট সংস্কারের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় পাউবো।

কিন্তু মেরামত হয়নি রেগুলেটরগুলো। সেই সঙ্গে গত বন্যায় দীর্ঘ বাঁধটির অধিকাংশ স্থান ভেঙে গেলেও সেগুলো আজও সংস্কার করা হয়নি। ফলে সমস্যা সমস্যাই থেকে গেছে। আর চলতি বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল, বাড়ি ঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মিত হওয়ায় এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নদী তীরবর্তী হাওয়ার বিল, বানিয়াপাড়া, ধারকি, ইকরগাড়া, দাশড়া, মহব্বতপুর, আমিড়াসহ জেলার কয়েক হাজার একর ফসলির জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে পানিবন্দী হয়ে পড়েন তারা। এ কারণেই কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর নদী এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসলহানি ঘটছে।

joyporhat

জয়পুরহাট সদর উপজেলার নদী এলাকার সতিঘাটা এলাকার ফরিদ হোসেন, ঘোনপাড়ার বেলায়েত হোসেন, ধারকী সোটাহারের বিমল চন্দ্রসহ আরও কয়েকজন জানান, প্রতি বছর বৃষ্টি হলে উপর থেকে আসা আঁটো (সরু) ও পলি জমে নদী ভরে যায়। ফলে ক্ষেতের পানি বের হতে পারে না, ফসল ডুবে যায়। দেখা দেয় বন্যা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও চুরি হওয়ার কারণে প্রায়ই অকেজো থাকে স্লুইসগেটগুলো। এ কারণে পানি বের হতে পারে না।

তারা আরও বলেন, এছাড়া বাঁধটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বাঁধের আশপাশের শত শত বাড়িঘর ডুবে যাওয়াসহ ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা করছি। এজন্য দ্রুত নদী খননসহ অবশিষ্ট রেগুলেটর ও বাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন।

সদর উপজেলার ঘোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান সাজু ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী খুরশিদ জাহান মারিয়া, মুকিত হোসেন, মারুফ হোসেন জানান, আমাদের স্কুলের পাশের বাঁধটি ভাঙ, বর্ষাকিালে স্কুলের মাঠ ও ভেতরে পানি ঢোকে, তখন আমরা স্কুলে আসতে পারি না, দ্রুত বাঁধটির সংস্কারের দাবি জানান তারা।

জয়পুরহাট পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তাজমিনুর রহমান বলেন, অধিকাংশ স্লুইচ গেটের রেগুরলেটর নির্মাণ করা হয়েছে, আর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নির্মাণের জন্য আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, অনুমোদন সাপেক্ষে বাঁধ সংস্কার করা হবে এবং নদী খননের জন্য একনেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

নদী খননের পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনে নির্মিত স্লুইসগেটগুলোর নিরাপত্তা ও বাঁধ নির্মাণ নিশ্চিত করতে পারলে বিলম্বে হলেও ছোট যমুনা ও তুলশীগঙ্গা নদীর এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে সফলতা আসবে-এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।

রাশেদুজ্জামান/এমএমজেড/জেআইএম

আরও পড়ুন