নুসরাত হত্যা মামলায় মাদরাসার নৈশ প্রহরীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন
আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার ৬ষ্ঠ দিনে মাদরাসার নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। আগামী ৭ জুলাই পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আদালত। ওইদিন কেরোসিন বিক্রেতা, বোরকা বিক্রেতা ও দোকানের কর্মচারীর সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, ৬ষ্ঠ দিনে মাদরাসার নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। গতকাল বুধবার ৫ম দিনে সাক্ষী সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিনের জেরা, মঙ্গলবার নুসরাতের সহপাঠী নাসরিন সুলতানার জেরা শেষে হলে সাক্ষী সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। আগামী ৭ জুলাই পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। ওইদিন কেরোসিন বিক্রেতা জসিম উদ্দিন, বোরকা বিক্রেতা লিটন ও দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার সকল আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালনে আনা হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় নুসরাত জাহান রাফির মাদরাসার নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফার সাক্ষ্যগ্রহণ। বিকেল ৩টায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এরপর তাকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। যা শেষ হয় রোববার (৩০ জুন)। পরে গত সোমবার ও মঙ্গলবার নুসরাত জাহান রাফির বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফূর্তির সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।
অভিযোগ গঠনের ছয়দিনের মাথায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদীপক্ষের তিনজন সাক্ষীকে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। ২০ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের আদেশ দেন আদালত। মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার আগে সাতজন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রে গেলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রের ১৬ আসামি হলেন- মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।
এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য পাঁচজনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করেন।
এছাড়া যৌন হয়রানির মামলার পর নুসরাতের জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাইবার অপরাধ আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
রাশেদুল হাসান/আরএআর/এমকেএইচ