দিন-দুপুরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা সামাজিক অবক্ষয় : আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, আমাদের দেশে তৈরি হওয়া জেএমবির সদস্যরা আইএসের অনুসারী হতে পারে। আমরা তাদের অনুসরণ করছি।
তিনি বলেন, এখন জঙ্গিরা ইন্টারনেটে বেশি সক্রিয়। তারা ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে। তারা সদস্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছে ইন্টারনেটে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি করছে তাদের। ইতোমধ্যে আমরা অনেক জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এটা গোয়েন্দাদের নিয়মিত নজরদারির ফলাফল। আমরা জঙ্গিদের যেকোনো অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দেব। আইএসের মতাদর্শ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ থেকে অনেকে সিরিয়া গেলেও একজনও দেশে ফিরে আসেনি।
সোমবার সকালে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সিসিটিভি ব্যবস্থা চালু, ওয়েবসাইটের উদ্বোধন ও মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মবণ্টন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
বরগুনার রিফাত হত্যার ঘটনার কারণ উল্লেখ করে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, একটা ছেলেকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। সবাই দেখল, কিন্তু কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না। এখন সমাজে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে অবক্ষয়ের চিত্র। এখন যেসব ছেলে পাড়া-মহল্লায় বড় হচ্ছে তারা মুরব্বিদের এমনকি মা-বাবাকেও মানে না। তারা এটাকে অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা মনে করছে। ছোটখাটো গ্রুপ তৈরি করছে তারা। মাস্তান গ্রুপ গড়ে তুলছে তারা। এসব গ্রুপের সদস্যদের বাবারা নিজেদের গর্বিত মনে করছেন। কারণ তাদের সালাম দিচ্ছে এলাকার লোকজন। কিন্তু এটি শ্রদ্ধার জন্য নয়, ভয়ে দিচ্ছে সালাম দিচ্ছে, সেটি বাবারা বোঝেন না। এটি সামাজিক অবক্ষয়। এই অবক্ষয়কে সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে মোকাবিলা করতে হবে।
সমাজ বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, কীভাবে সামাজিক এই অবক্ষয় দূর করা যায় সেজন্য চিন্তা-ভাবনা করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্যসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নয়নের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা রিফাতকে দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়। এ সময় বারবার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।
একপর্যায়ে গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রিফাত মারা যান।
জিতু কবীর/এএম/জেআইএম