শাহীনের ভ্যানটি খুঁজছে পুলিশ
পরিবারের অভাবের তাড়নায় মাঝে মধ্যে ভ্যান চালাতো ১৪ বছর বয়সী শাহীন মোড়ল। ভ্যানটি শাহীনের বাবা হায়দার আলীর। তবে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার কষ্ট লাঘবের জন্য শাহীনও স্কুল ছুটির দিন ভ্যান নিয়ে বের হতো রোজগারের আশায়। এভাবেই ভালোভাবে দিন পার হচ্ছিল যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের বাসিন্দা শাহীনের পরিবারের।
গত শুক্রবার সকালে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করে শাহীনের ভ্যানটি ভাড়া করে কে বা কারা। ছুটির দিন হওয়ায় ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শাহীন। দুপুরের দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়া ইউনিয়নের শার্শা এলাকায় শাহীনের মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার ভ্যান ও সঙ্গে থাকা মোবাইলটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অচেতন অবস্থায় ঘটনাস্থলেই পড়ে থাকে রক্তে ভেজা শিশু শাহীন।
ঘটনাস্থলে জ্ঞান ফিরলে কান্নাকাটির শুরু করে শাহীন। বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসার পর তারা খবর দেয় থানায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহীনকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত শাহীনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শনিবার দুপুরে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই শনিবার গভীর রাতেই তার অপারেশন করা হয়। তবে রোববার সন্ধ্যায় ৬টা পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি তার।
কেশবপুর উপজেলার ৫নং মঙ্গলকোর্ট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য শিশু শাহীনের প্রতিবেশী জহির রায়হান জানান, শাহিন ছোট মানুষ। ভালো ছেলে। স্থানীয় গোলাগাটা মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। অভাবের তাড়নায় ছুটির দিন বাবার ভ্যানটি চালায় সে। পরিবারটিও খুব অসহায়। বসতভিটা ছাড়া কিছুই নেই তাদের। শুক্রবার সকালে মোবাইলে কল করে ডেকে নিয়ে নৃশংস এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় কারা জড়িত থাকতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শাহীনের এলাকায় কোনো শত্রু নেই। কারও সঙ্গে কখনও ঝগড়া হয়েছে এমনটাও শুনিনি। তবে এলাকায় যারা মাদকাসক্ত তারাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা তার। পুলিশ প্রশাসন চাইলে মোবাইলের কললিস্ট তুলে যাচাই করলেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কারা সেটি উদঘাটন হবে। আমরা অপরাধীদের শাস্তি চাই।
এদিকে, অমানবিক ও নৃশংস এ ঘটনাটির রহস্য উৎঘাটনে তৎপর পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল ও ভ্যান উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশের একাধিক টিম। রোববার বেলা ৪টায় কেশবপুর উপজেলায় মঙ্গলকোর্ট গ্রামে শিশু শাহীনের বাড়িতে যান সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিশ ও পাটকেলঘাটা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল ইসলাম।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অমানবিক ও নৃশংস এ ঘটনার তদন্তে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। ছিনতাই হওয়া ভ্যান ও মোবাইল উদ্ধার করতে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা অপরাধীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে পারবো।
ঘটনার বিবরণ জানিয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে শাহীন যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন একজন যাত্রী ছিল। তদন্তকালে আমরা জেনেছি প্রথমে সে একজন যাত্রী নিয়ে মঙ্গলকোর্ট বাজারে যায়। এরপর সেখান থেকে তিনজন যাত্রী নিয়ে সাগরদাড়ি এলাকায় আসে। তারপর সাগরদাড়ি পার হয়ে পাটকেলঘাটা থানা এলাকা ও সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে প্রবেশ করে।
তিনি বলেন, পাটকেলঘাটা থানার মধ্যে এক কিলোমিটার আসার পর তাকে একটি পাট ক্ষেতে নিয়ে যায় তারা। তারপর শাহিনকে কুপিয়ে তার ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে শাহীনের কান্নাকাটির আওয়াজ পেয়ে স্থানীয়রা পাটকেলঘাটা থানা পুলিশে খবর দেয়। সেখান থেকে পাটকেলঘাটা থানা পুলিশ শাহিনকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে আমাদের তত্বাবধানে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেলে।
পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, এ ঘটনায় শিশু শাহিনের বাবা হায়দার আলী বাদী হয়ে আজ্ঞাতনামা তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়েছেন। সাতক্ষীরা ও যশোর জেলা পুলিশ মামলাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। শিশু শাহিনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে।
আকরামুল ইসলাম/এমএএস/এমএস