নুসরাত হত্যা মামলায় বাদীর জেরা শেষ

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের জেরা শেষ করেছেন আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা মামলার বাদীর দ্বিতীয়দিনের জেরা শেষ করেন। পরে নুসরাতের দুই সহপাঠী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফূর্তির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সোমবার (১ জুলাই) দিন ধার্য করেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, বাদীসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নুসরাত হত্যা মামলার ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের কৌঁসুলিরা বাদীকে জেরা করেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, ২৭ জুন নুসরাত হত্যা মামলার বাদীসহ তিনজন সাক্ষীকে তলব করেন আদালত। ওই দিন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে আসামিপক্ষের নয় কৌঁসুলি জেরা করেন। আজ বাকি সাত কৌঁসুলি জেরা করেন। আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) নুসরাতের দুই সহপাঠীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ১৬ আসামির সবাই উপস্থিত ছিলেন।

২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট দেন।

৩০ মে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে শুনানি না করে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ১০ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।

১০ জুন আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০ জুন চার্জ গঠন করেন। ২৭ জুন বাদীসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। ওই দিন সাক্ষ্য প্রদান শেষে বাদীকে জেরা করেন আইনজীবীরা।

নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নুসরাতের মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

রাশেদুল হাসান/এএম/এমকেএইচ