ইয়াবা গডফাদারের বাড়িতে ‘ভূতের আছর’
ইতিপূর্বে একাধিক ইয়াবা কারবারির আলিশান বাসায় ভাঙচুর হয়েছে। এসব ঘটনা পুলিশের সঙ্গে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা করেছে বলে অভিযোগ তোলা হলেও সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা ডন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাফর আহমেদের বাড়িতে ‘ভূতে’ হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। রাতের আঁধারে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় প্রভাবশালীর আলিশান বাড়িতে কে বা কারা এমনটি করলো কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তাই এলাকায় গুঞ্জন চলছে ‘ভূতের দল’ ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালিয়ে চলে গেছে।
বুধবার দিনগত রাতে টেকনাফ সদরের লেঙ্গুরবিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরে দৃষ্টিনন্দন ‘ইয়াবা বাড়িটি’ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে।
জাফর চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ডান হাত ও সব অপকর্মের পার্টনার বলে জনশ্রুতি রয়েছে। রাতের আঁধারে তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর থেকে শুরু করে ভবনটি ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়ার ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা নিয়ে এলাকায় জল্পনার শেষ নেই। ঘটনার সময় পুলিশের গাড়ির টহলে থাকার কথা শোনা গেলেও পুলিশ তাদের উপস্থিতি অস্বীকার করেছে। অভিযোগ না আসায় পুলিশও এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তাই দুদিন পেরিয়ে গেলেও কারা ঘটনা ঘটালো সবই অগোচরে রয়ে গেছে।
সচেতন মহলের মতে, রাজনীতির ক্ষমতার চাদরে ইয়াবা কারবারে কোটিপতিদের প্রতি ক্ষুব্ধ লোকজন ‘ইয়াবা বাড়ি’ গুড়িয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে বলছেন ইয়াবা বাড়িতে ‘ভূতের’ আছর পড়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে ভাঙচুরের খবর শুনেছি। তবে কে বা কারা ভাঙচুর করেছে তা এখনও জানা যায়নি। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও থানায় কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অব্যাহত অভিযানে ইয়াবা কারবারিদের অবস্থা নাজুক। সাধারণ মানুষও মাদক কারবারিদের উপর ক্ষুব্ধ। আর একযুগ ধরে একীভূত ক্ষমতার ভেতর থাকায় জাফরদের উপর সাধারণ মানুষের ঘৃণা অনেক। হয়তো এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে বিক্ষুদ্ধ জনতা ইয়াবা গডফাদারের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। আবার তাদের প্রতিপক্ষ বা দুর্বৃত্তরাও এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে মনে করেন ওসি।
স্থানীয়দের মতে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর ও তার তিন ছেলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ করা ৭৩ জন ইয়াবা কারবারির তালিকায় ৩ নম্বরে আছেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী জাফর আহমদ। পিতা-পুত্র ৪ জনই ২০০৯ সালে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ক্ষমতার দাপটে ইয়াবায় কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর, প্রধান ফটক, ঘরের দরজা, জানালা ও কক্ষের আসবাবপত্র ভেঙে চুরমার করে ফেলা হয়েছে। ইয়াবা ভূট্টোর বাড়ি শৃংখলা বাহিনী দখলে নেয়ার পর থেকে জাফর চেয়ারম্যানের বাড়ির সদস্য এ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। তাই ভাঙচুরের সময় কেউ বাড়ি ছিল না বলে প্রকাশ পায়।
স্থানীয়রা জানায়, টেকনাফে ইয়াবাবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার পর থেকে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডন জাফর আহমদ ও তার ছেলে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াসহ পরিবারের সব সদস্য পালিয়ে আত্মগোপন করেছে। বর্তমানে তার দুই তলা আলিশান ইয়াবা বাড়িতে কেউ থাকে না। এ অবস্থায় রাতের আঁধারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা সকালে দেখেছি।
সূত্রমতে, সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদ তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার। ইয়াবা গডফাদারের তালিকায় তার তিন ছেলে সদর ইউপির চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, দিদার মিয়া ও মো. ইলিয়াছের নাম রয়েছে। এর মধ্যে দিদার মিয়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন ইয়াবা কারবারির সঙ্গে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে রয়েছেন।
আর জাফর চেয়ারম্যান এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তৎকালীন সাংসদ আব্দুর রহমান বদির হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর তিনি এমপি বদির কলকাঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তিনি প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দলের নেতার ভূমিকায় থাকায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দেদারছে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েন। তার ছেলেরাও সিন্ডিকেট করে ইয়াবায় কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন। সীমান্তে বর্তমানে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের কারণে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জেআইএম