যশোর ও ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে আমি ঋণী
যশোরের মানুষ বেদনার্ত হৃদয়ে বিদায় দিলেন বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়ালকে। মঙ্গলবার শেষ অফিস করে তিনি যশোর থেকে বিদায় নেন। এসময় তিনি চলন্ত গাড়ি থেকে বার বার ফিরে তাকাচ্ছিলেন প্রিয় সহকর্মী ও কার্যালয়ের দিকে। তাকে বহন করা গাড়িটি চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে ছিলেন পূর্বের সহকর্মীরাও। এক পর্যায়ে দু'দিক থেকেই তাকানোর সমাপ্তি ঘটে।
যাহোক, এদিন যশোরের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। তিনি যশোরের ৩২তম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন।
মো. আব্দুল আওয়াল ঠাকুরগাঁও থেকে যখন যশোরে বদলি হয়েছিলেন তখন ঠাকুরগাঁওয়ে কান্নার রোল পড়েছিল। এ কারণে যশোরের সাধারণ মানুষ তাকে পেতে উদগ্রীব ছিলেন।
২০১৮ সালের ১১ মার্চ যশোরে যোগদান করার পর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দিয়ে তিনি সকলের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেন। বুধবারের গণশুনানিকে দোতলা থেকে নিয়ে আসেন কালেক্টরেটের কাঁঠাল চত্বরে। পিছিয়ে পড়া, অসহায় ও বয়োবৃদ্ধরা (যারা দোতলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রবেশেরই সাহস পেতেন না!) সেখানেই জেলা প্রশাসকের সান্নিধ্য পেতে শুরু করেন। ফলে গণশুনানির বিষয়টি ব্যাপক প্রচার পায়। যা আগে অনেকেই জানতেন না।
এছাড়া বেজপাড়ার (বুনোপাড়ার) ‘সাঁওতালদের’ পাশে দাঁড়ানো, প্রশাসনের কর্মচারীর উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে ঢাকায় পাঠানো, কিম্বা ইজিবাইকে বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো শিশুটির ঠিকানা দেয়াসহ এমন অসংখ্য ঘটনা পাওয়া যাবে, যা এ মানুষটিকে যশোরের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই দেবে। তবে এসব কিছুর চেয়েও বড় ঘটনা দড়াটানার ভৈরব পাড়ের জঞ্জাল (অবৈধ স্থাপনা) অপসারণ। এরপর ভৈরবপাড়কে নান্দনিক করে তোলার প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। যা বাস্তবায়ন হলে ভৈরব হবে শহরের প্রাণকেন্দ্রের অন্যতম একটি বিনোদনকেন্দ্র।
আব্দুর আউয়াল যেখানেই গেছেন সেখানেই মানুষকে আপন করে নিয়েছেন। মিশে গেছেন মানুষের সঙ্গে। ব্র্যাকের শিশুদের ইংরেজি ভীতি দূরীকরণের সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার কথা তার, কিন্তু তিনি এসেই হোয়াইট বোর্ডে মার্কার হাতে অভাবনীয় একটি ক্লাস নিলেন। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করলেন তার ক্লাস। মনে হলো, ‘ইংরেজি তো পানির মতো সোজা’।
সদ্য যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত বিদায়ী জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল মঙ্গলবার কালেক্টরেট কার্যালয়ে নতুন জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এবং সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ তাকে বেদনাসিক্ত হৃদয়ে বিদায় দিয়েছেন।
এদিকে, নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ দায়িত্ব গ্রহণের পর মঙ্গলবার সার্কিট হাউজে প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি সভা ও সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। এটি শেষে বিদায়ী জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) আব্দুল আওয়াল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রেজায়ে রাব্বী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) অনিন্দিতা রায় প্রমুখ। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শফিউল আরিফ যশোরে যোগদানের আগে লালমনিরহাটে জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর বিদায়ী জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।
যশোর ছেড়ে আসা বিদায়ী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে বুধবার কথা হয় জাগো নিউজের।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও ও যশোরে জেলা প্রশাসক হয়ে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এ দুই জেলার মানুষের ভালোবাসা আমার জীবনের অনেক চাহিদা পূরণ করে দিয়েছে। কোনো মানুষ অপরিচিত একজন মানুষকে এতটা ভালোবাসতে পারে সেটা বুঝতাম না যদি জেলা প্রশাসক হয়ে এ দুই জেলায় কাজ না করতাম।
তিনি আরও বলেন, আমি সাধ্যমতো কাজ করার চেষ্টা করেছি এ দুই জেলায়। কিন্তু সব কাজ সমাপ্ত করতে পারিনি। তিনি আব্দুল আউয়াল বলেন, যশোর ও ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে আমি ঋণী।
আব্দুল আউয়াল আগামী ৩০ জুন বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক হিসেবে যোগদান করবেন।
মিলন রহমান/এমএএস/পিআর