তাহলে ফ্লোর ভাসা রক্ত কার?
ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সাত বছর ধরে নৈশপ্রহরীর দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াকুব আলী শেখ (৩৮)। স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তানের ব্যয় বহন করতে দিনে শহরের দক্ষিণ আলীপুরের একটি সেলুনেও কাজ করেন তিনি। পরিবারে একটু স্বাচ্ছন্দ্য আনতে দিন-রাত পরিশ্রম করা মানুষটির ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়েই এখন যত সংশয়।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ইয়াকুব আলী শেখ। সেখান থেকে স্কুলের ডিউটি করতে সন্ধ্যায় রওনা হন শহরে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে স্কুল থেকে ইয়াকুবের পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়, স্কুলের বারান্দায় রক্ত পড়ে আছে, কিন্তু ইয়াকুবের কোনো খোঁজ মিলছে না। এরপর ইয়াকুবের স্ত্রী তার মা ও ভাইদের নিয়ে স্বামীর খোঁজে স্কুলে ছুটে আসেন। ফ্লোরে রক্ত দেখে তাদের আর্তচিৎকারই বলে দিচ্ছে- কী হতে পারে ইয়াকুবের ভাগ্যে!
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বেগম বলেন, সকালে স্কুলে প্রথম আসেন ঝাড়ুদার দুলাল জমাদ্দার। তিনি এসে স্কুলের গেট বন্ধ পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে আমার বাড়িতে আসেন। পরে দফতরি রেজাউল করিমকে ডেকে এনে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করি। এসময় স্কুলের বারান্দায় ইয়াকুবের গায়ের রক্তাক্ত শার্ট, ফ্লোরে কয়েক জায়গায় অনেক রক্ত ও মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ ও ইয়াকুবের পরিবারকে খবর দেই।
ইয়াকুবের স্ত্রী ছকিনা বেগম জানান, গত কয়েক মাস ধরেই এখানে (স্কুলে) ডিউটি করতে চাচ্ছিলেন না তিনি (ইয়াকুব)। এখানে গত জানুয়ারি মাসেও কম্পিউটার ল্যাবে চুরি হয়েছে। তাছাড়া মাদকসেবীদের প্রচুর আড্ডা হতো। এগুলো ইয়াকুব পছন্দ করত না। অনেকবার স্কুলে নালিশও করেছে। এছাড়া ওর কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো ঝামেলা ছিল না।
ইয়াকুবের শ্যালক মিনারুল বলেন, আমার দুলাভাই গত কয়েকদিন ধরে খুব ভয়ে ছিল। কারণ স্থানীয় মাদকসেবীরা রাতে স্কুলের বারান্দায় মাদকের আসর বসাত। এগুলোতে বাধা দিতেন তিনি। এই কারণে দুলাভাইয়ের বেশ শত্রুও তৈরি হয়েছিল। কয়েকদিন আগে দুলাভাই আমাকে বলেছিল- আমার স্কুলে যেতে ভয় করে। রাতে ঘুম আসলে কখন যে ওরা কী করে ফেলে তার ঠিক নাই। তুই আমার সঙ্গে চল, রাতে আমার সঙ্গে থাকবি।
ইয়াকুবের পরিবারের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে সহকারী প্রধান শিক্ষক শামীমা বলেন, মাঝে মধ্যে মাদকসেবীরা রাতে উৎপাত করত। বিষয়টি ইয়াকুব আামাদের জানালে আমরা এই এলাকায় থাকা গোয়েন্দা পুলিশকে মৌখিকভাবে তা জানাই। পরে পুলিশ মাদকসেবীদের কয়েকবার ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়েছে।
ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোতয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার আলামত দেখে মনে হয়েছে ইয়াকুবের সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। এখনও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোতয়ালি থানায় স্কুলের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
বি কে সিকদার সজল/এমবিআর/পিআর