মেয়র আরিফ সিলেট কারাগারে
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) বরখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেট কারাগারে আনা হয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কড়া নিরাপত্তা দিয়ে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়।
আরিফুল হক চৌধুরীকে সিলেট কারাগারে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া বলেন, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর উনার সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজিরার তারিখ ধার্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে কারাবন্দি আরিফুল হক চৌধুরীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় আরিফকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরপর বিকেলেই কারা কর্তৃপক্ষ আরিফকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন।
মঙ্গলবার রাত ৮টা ৩৮মিনিটের সময় সাদা রঙয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে ডিএমপি পুলিশের একটি দল আরিফকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ত্যাগ করে। গ্রেফতারের প্রায় আট মাস পর সিলেটে আসলেন আরিফ।
মেয়র আরিফের পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেলে আরিফের এমআরআই করার পর মাথা ও মেরুদণ্ডের মাঝামাঝি স্থানে কয়েকটি ক্রেক ইনজুরি ধরা পড়ে। ৪, ৫, ও ৬ নম্বর কডে ক্রেক ছাড়াও আরিফের হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিক সমস্যা রয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ড সে সময় দেয়া প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘আরিফের মেরুদণ্ডের জোড়ার জায়গাটি ভাঙা। সার্ভাইকাল কোডের উপর বড় ধরণের চাপ রয়েছে। যদি এতে হঠাৎ চাপ পড়ে তাহলে পঙ্গুত্ব ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ অবস্থায় কোনো প্রকার দীর্ঘ ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে যা যেকোন সময় তার হাত-পা অবশ (প্যারালাইসিস) হওয়ার কারণ হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আরিফুল হক চৌধুরীর শারীরিক এমন অবস্থায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ ৯ দফা পিছিয়েছে। অসুস্থতার ফলে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আরিফকে হাজির করতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ।
গত রোববার কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। একই কারণে এদিনও আরিফকে হাজির করা হয়নি। এদিন আরিফের অসুস্থতা তুলে ধরে তার আইনজীবী তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিতে আদালতে আবেদন করেন।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মকবুল আহসান আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করে আরিফের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন বলে জানান ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর। এ দিন মামলার চার্জ গঠনেরও তারিখ ধার্য করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন। আর এ ঘটনায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় আরিফসহ ১১ জনের নাম যুক্ত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন।
পরে ৩১ ডিসেম্বর দুপুরে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিম রোকেয়া আক্তারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন আরিফুল হক চৌধুরী। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরদিন তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পাড়লে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে আর সিলেট আনা হয়নি।
ছামির মাহমুদ/এআরএ/পিআর