মাত্র ৩ বছর বয়সেই মরতে বসেছে হীরা
২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করে হীরা। জন্মের পর স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিল। ২ বছর বয়সেই শক্তি আর ক্ষিপ্রতায় পরিপূর্ণ হয়ে আফ্রিকান সিংহ হিসেবে হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করে হীরা। এমনকি ২০১৮ সালের শুরুতে সাফারি পার্কের একটি শক্ত লোহার গেট ভাঙার চেষ্টা করে সে। কিন্তু শক্তশালী সেই হীরাকে সাফারি পার্ক থেকে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায় আনার প্রায় ১ বছরের ভেতরে শক্তি, ক্ষিপ্রতা আর জৌলুস হারিয়ে এখন সে মৃত্যু পথযাত্রী।
যেখানে একটি সিংহের গড় আয়ু প্রায় ২০ বছর সেখানে কীভাবে জন্মের ৩ বছরেই মৃত্যুর পথে এই সিংহটি? এর জন্য প্রাণীপ্রেমীরা চিড়িয়াখার অবহেলাকে দায়ী করলেও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছে তার জন্মগত ত্রুটি ছিল।
যদিও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সাবেক প্রকল্প পরিচালক সফিউল আজম জানিয়েছেন জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেয়ার সময় সিংহটি সুস্থ ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করে হীরা। ২০১৮ সালের ২ মে সাফারি পার্ক থেকে হীরা নামের এ সিংহটিসহ মোট ৪টি সিংহ ও দুটি ভাল্লুক চিড়িয়াখানায় দেয়া হয়। সিংহটি তখন পুরপুরি সুস্থ ছিল। এমনকি চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসার ৩/৪ দিন আগে সিংহটি সাফারি পার্কের একটি গেট ভাঙার চেষ্টা করে পায়ে একটু ব্যথাও পায়। যে সময় ওই ৬টি প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় আনা হয় তখন ৪ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তাদের সব পরীক্ষা করেন।
কিন্তু চিড়িয়াখানায় আসার পর থেকেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনে দিনে সে মৃত্যুর পথের যাত্রী হয়েছে। এমনকি তার গায়ে মাছি ভনভন করা অবস্থায়ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তার প্রদর্শন অব্যহত রাখে। পরে অসুস্থ হীরার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে রোববার সিংহের খাঁচাকে দর্শনার্থীদের থেকে আড়াল করে রাখে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হীরা আফ্রিকান সিংহ কিন্তু যে সিংহটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেটা ইন্ডিয়ান সিংহ। আমাদের চিড়িয়াখানার এই সিংহটি জন্ম থেকেই অসুস্থ ছিল তার উপর গত আড়াই মাস যাবত সে এতটাই অসুস্থ যে স্বাভাবিক খাবার মুখে তুলছে না। তার চিকিৎসার জন্য আমরা দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছি এবং প্রতিদিন মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়ে আপডেট দিচ্ছি।
তিনি আরও জানান, গতকাল থেকে সুস্থ হয়ে উঠছে সিংহটি। আশা করি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।
তবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সাবেক প্রকল্প পরিচালক সফিউল আজম জানান, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সিংহটি নেয়ার সময় দেখেশুনে নিয়েছে। অসুস্থ প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় দেব কেন?
এদিকে এরজন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন প্রাণীপ্রেমিরা। পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেরার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক এমিল জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু বারবার চিড়িখানার খাবার নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠছে তাই আমাদের প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। তারউপর এটা মানতে হবে এখানে দ্বায়ীত্বশীলদের চরম অবহেলা ছিল। এর আগেও আমরা কুমিল্লাতে একই ঘটনা দেখেছি।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান জাগো নিউজকে জানান, একটি সিংহের গড় আয়ু সাধারণত ১৫ থেকে ২০ বছর। কিন্তু ৩/৪ বছরে একটি সিংহ স্বাভাবিক থাকলে এমন হওয়ার কথা না। তবে যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারে সেটাও ঠিক। সঠিক পরিচর্যা আর চিকিৎসা নিশ্চিত করাকেই এই মুহূর্তে সবার আগে প্রাধান্য দেয়া উচিত।
রিপন দে/এফএ/এমকেএইচ