২৮ হাজার টাকার বিলে ৬০ হাজার তোলেন তিনি
চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে যশোর জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থা। বাড়ি ভাড়ার ভুয়া রশিদ দিয়ে লোপাট করা হচ্ছে সংস্থাটির অফিস ভাড়ার টাকা।
সবচেয়ে বড় অনিয়ম-দুর্নীতি হয় সংস্থার বিভিন্ন ট্রেডের প্রশিক্ষণে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত এসব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষণার্থীদের এ ভাতা ঠিকমতো দেয়া হয় না। এখানেও লুটপাট চালানো হয়।
এসবের পাশাপাশি নৈশপ্রহরী নিয়োগ না দিয়েও ভুয়া ভাউচার দিয়ে বেতন উত্তোলনের পাশাপাশি নানা অনিয়ম করা হয়। এসব অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সংস্থার যশোর জেলা শাখার চেয়ারম্যান লাইজু জামান কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করছেন। গত ১৫ বছর ধরে তিনি এ সংস্থার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। দীর্ঘসময় তিনি ওই পদে থেকে সংস্থার অর্থ লুটপাট করে বাড়ি গাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়মানুযায়ী তিনি সভা আহ্বান করেন না। এমনকি কারও মতামতের ধার ধারেন না।
জাতীয় মহিলা সংস্থা যশোর শাখার চেয়ারম্যানের এসব দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির বেশ কয়েকজন সাবেক সদস্য। তাদের করা অভিযোগের সূত্র ধরে লাইজু জামানের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের খবর পাওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যশোর জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার বর্তমান অফিসটি শহরের মুজিব সড়কে সংস্থাটির কর্মকর্তা জেসমিন আরার বাড়িতে অবস্থিত। লাইজু জামান বাড়িওয়ালা জেসমিন আরার সঙ্গে যোগসাজশ করে বাড়ি ভাড়ার টাকা লোপাট করেন। প্রকৃতপক্ষে অফিসভাড়া বাবদ বাড়িওয়ালাকে প্রতিটি ফ্লোরের জন্য সাত হাজার টাকা হিসেবে চারটি ফ্লোরের ভাড়া ২৮ হাজার টাকা দেয়া হয়। কিন্তু সংস্থার চেয়ারম্যান লাইজু জামান বাড়ি ভাড়ার ভুয়া রশিদ দিয়ে সংস্থার ব্যাংক হিসাব থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৬০ হাজার টাকা তুলে নেন।
এদিকে, সংস্থাটি অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তা বিকাশসাধন প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এসব ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রতিদিন ১০০ টাকা ভাতা দেয়া হয়। এ ভাতা প্রদানেও অনিয়ম দুর্নীতির শেষ নেই। এমনকি একটি ট্রেডে ভর্তি প্রশিক্ষণার্থীকে অন্য ট্রেডে ভর্তি দেখিয়ে তার ভাতার টাকা তুলে পুরোটা লোপাট করে নেয়া হয়। এর পাশাপাশি ভর্তি বাতিলের ভয় দেখিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক বা তার বেশি টাকা নেয়া হয়।
সংস্থার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ কার্যক্রমেও রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতি। বিশেষ করে ১৫ দলের ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। কাগজে-কলমে ৩৪ জন গ্রহীতার মাঝে ঋণ বিতরণ করা হলেও মূলত অন্যদের মাধ্যমে এসব ঋণের টাকা গ্রহণ করেছেন চেয়ারম্যান ও জেলা কর্মকর্তা। আর রাজস্ব খাতে দর্জির কাজ ও সেলাই প্রশিক্ষণে ৫০ থেকে ৬০ জনকে ভর্তি দেখিয়ে ১০০ টাকা হারে বিল তুলে নেয়া হয়েছে।
নিয়মানুযায়ী সংস্থাটির বিশেষায়িত আধুনিক ট্রেড প্রশিক্ষণ কোর্স কর্মসূচিতে একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও কোনো নৈশপ্রহরী নিয়োগ না দিয়ে অফিসের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে জব্বার আলী নামে একজনকে চার হাজার ৫০০ টাকায় নিয়োগ দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোনো নিয়োগ না দিয়েই ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে নৈশপ্রহরীর বেতনের টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
এছাড়া যশোর জেলা মহিলা সংস্থায় এসএসসির ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে নাজমুন আক্তার নামে একজন মহিলা ট্রেড প্রশিক্ষক পদে চাকরি করছেন। সংস্থার চেয়ারম্যান বিষয়টি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ১০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে তার চাকরি নিয়মিতকরণের সুপারিশ করেছেন। এসব অনিয়ম তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে সংস্থার যশোর জেলা শাখার চেয়ারম্যান লাইজু জামান বলেন, একটি পক্ষ জেলা প্রশাসকের কাছেও অভিযোগ দিয়েছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার শুনানি হবে। সেখানে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করব। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
মিলন রহমান/এএম/এমএস