বগুড়া সদর আসনে মর্যাদার লড়াইয়ের অপেক্ষা
বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে। ২৪ জুন (সোমবার) ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনের মাঠে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দলীয় প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে। ধানের শীষের প্রার্থী জিএম সিরাজ এর আগে বগুড়ার অন্য একটি আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে টানা তিন দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও নৌকার প্রার্থী টি জামান নিকেতা এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকায় ভোট চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো ছাড়াও জিয়া পরিবারের অত্যন্ত মর্যাদার এই আসন ধরে রাখতে ধানের শীষে ভোট চাইছে বিএনপি। তবে দুই দলই এবারের এই নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে। ভোটারদের কাছেও ভোট প্রার্থনা করা হয়েছে সেভাবেই।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টি জামান নিকেতা (নৌকা), বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর (লাঙ্গল), মুসলিম লীগের রফিকুল ইসলাম (হারিকেন), বাংলাদেশের কংগ্রেসের মুনসুর রহমান (ডাব) ও মিনহাজ মণ্ডল (আপেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২৪ জুন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের নির্বাচনে ১৪১টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ১১১টি কেন্দ্র ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলার বিশেষ শাখা (ডিএসবি) পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এসব ভোটকেন্দ্রে যেকোনো ধরনের গোলযোগ ও সহিংসতা এড়াতে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয় প্রস্তুত করার কথা জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঞা।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয় নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচনী এলাকায় যেকোনো ধরনের গোলযোগ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাজ করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
ডিএসবি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া-৬ আসন। ২৪ জুন অনুষ্ঠেয় এই আসনের নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সাড়ে তিন হাজার সদস্য কাজ করবেন। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার পুলিশ, ৪০০ বিজিবি সদস্য, র্যাবের ৪৫০ সদস্য এবং ১ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য রয়েছেন।
ডিএসবি সূত্র জানায়, বিগত নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আনসার সদস্যদের সঙ্গে একজন পুলিশ দায়িত্ব পালন করত। এবার ভোটগ্রহণের দিন ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ ১১১টি ভোট কেন্দ্রে একজন পরিদর্শক বা উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। অন্য ৩০টি কেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন থাকবে চারজন করে। প্রতিটি কেন্দ্রে ১২ জন করে আনসার বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটগ্রহণের আগেই মাঠে নামবেন ১৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। প্রতিটি ইউনিয়নে এক প্লাটুন এবং বগুড়া শহরে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি প্লাটুনে বিজিবির সদস্য থাকবেন ২০ থেকে ৩০ জন। ভোটগ্রহণের দিন র্যাবের ১৫ প্লাটুন সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে। এর বাইরে ১০ সদস্যের ১৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভোটের দিন কেন্দ্র এলাকায় প্রস্তুত থাকবে। ২৫জন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে সহিংসতা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকবে ২৬টি ভ্রাম্যমাণ দল।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকতা এসএম জাকির হোসেন জানান, শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য ১৪১ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৯৫৪ জন পোলিং অফিসারসহ প্রায় ৩ হাজার নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে মহাজোটের প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমরকে হারিয়ে বিজয়ী হন। পরে মির্জা ফখরুল শপথ না নেয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই আসনে ২৪ জুন ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার ভোট দিবেন।
লিমন বাসার/আরএআর/এমএস