সিএস অফিসে গেলেই হজযাত্রীদের পাঠিয়ে দেয়া হয় ক্লিনিকে
নারায়ণগঞ্জে হজযাত্রীদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা। একই সঙ্গে নেয়া হয় কমিশন বাণিজ্য।
সরকারিভাবে বিনাখরচে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা থাকলেও জিম্মি করে তাদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন সিভিল সার্জন অফিসের কিছু কর্মকর্তা। এর মধ্যে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হজে যাওয়ার আগে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সরকারিভাবে সিভিল সার্জন অফিসে কিংবা সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সুযোগ থাকলেও সেখানে গেলে নির্দিষ্ট দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হজযাত্রীদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। যেসব হজযাত্রী ওই দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান না তাদের দিনের পর দিন ঘুরতে হয় সিভিল সার্জন অফিসের বারান্দায়। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ওই নির্দিষ্ট দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান হজযাত্রীরা।
আব্দুল মালেক নামের এক হজযাত্রী বলেন, জেলা সিভিল সার্জন অফিসে গেলে দুইজন কর্মকর্তা আমাকে ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন। সরকারিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চেয়েছিলাম। দুইদিন ঘুরেছি তাদের পেছনে, তবুও কোনো কাজ হয়নি। একজন আরেকজনের ওপর দায়িত্ব দেন। বলে মানুষ নেই, যন্ত্রপাতির অভাব। এসব অজুহাত দেখান তারা। পরে বাধ্য হয়ে ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই। সরকারিভাবে করালে হয়তো ২০ থেকে ২৫ টাকা লাগতো। কিন্তু ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আমার ১১০০ টাকা খরচ হয়েছে।
একই অভিযোগ করে আরেক হজযাত্রী বলেন, জেলা সিভিল সার্জন অফিসে আসার পর আমাকে সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সিভিল সার্জন অফিস থেকে অধিকাংশ হজযাত্রীকে ইউনাইটেড ও সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নেই। আবার সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন থাকলেও তারা নবায়ন করেনি। মূলত তাদের থেকে কমিশন নিয়ে আমাদের এখানে আসতে বাধ্য করছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা। সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট এনে জমা দেয়ার পরই হজযাত্রীদের টিকা দেয়া হয়।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িত আছেন আমিনুল হক, যিনি সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
পাশাপাশি সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে জড়িত আছেন স্বপন কুমার দেবনাথ, তিনি জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক। ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হজযাত্রীদের পাঠিয়ে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছেন ওই দুই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ বলেন, একজন হজযাত্রী যেখানে সুবিধা পাবেন সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আনতে পারেন। এটি হজ এজেন্সির মাধ্যমে করে নিয়ে আসার কথা। কিন্তু কেউ যদি সরাসরি সিভিল সার্জন অফিসে এসে করতে চায়, সেখানে কোনো টাকা লাগে না। যারা এমন কাজ করেছেন আমি আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। যদি ঘটনা সত্য হয় তাহলে অবশ্যই এটি অন্যায় হয়েছে।
মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/এমকেএইচ