ধর্ষক জামিনে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধর্ষিতার মৃত্যু
জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ৮ বছরের ধর্ষিত শিশু আছিয়া। ধর্ষণের এক বছর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোররাতে শিশুটি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এদিকে আছিয়ার মরদেহ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আনার পর সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শিশুটিকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসেন শত শত মানুষ।
আছিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মালতী গ্রামের দিনমজুর আশরাফ আলীর মেয়ে। গত বছরের ৯ জুন তাকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের তায়েজ উদ্দিনের বখাটে ছেলে মাহবুব (১৫)। এ বিষয়ে দায়েরকৃত মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। আসামি বর্তমানে জামিনে থাকলেও এ ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৯ জুন ধর্ষক মাহবুব আছিয়াকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। এতে আছিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে এলেঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে, পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার আরও অবনতি হলে শিশুটিকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।
তবে ২০১৮ সালের ৯ জুন আছিয়ার বাবা আশরাফ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের তায়েজ আলীর ছেলেকে মাহবুবকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ধর্ষিতার পরিবার। পরে তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট মামলার চার্জশিট প্রদান করে পুলিশ।
শিশু আছিয়ার নানা হযরত আলী বলেন, ঢাকায় আত্মীয়ের একটি বাসাতে সোমবার ভোররাতে আছিয়া ব্যথ্যায় ছটফট করতে থাকে। ওকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায়। সোমবার দুপুরের দিকে তাকে কালিহাতীর মালতীতে আনা হয়। ধর্ষণের যথাযথ বিচার চেয়েছেন এলাকাবাসী।
কালিহাতীর নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুকুর মাহমুদ বলেন, লাশ বাড়িতে আনার পর আমি গিয়েছিলাম। শিশুটি ঢাকায় ওর আত্মীয়ের বাসায় মারা গেছে। শিশুটিকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসাপাতলে কর্মরত শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনস্টোপ ক্রাইসিস সেল এর অফিসার (পিও) বায়েজিদ বলেন, ওই সময় ধর্ষণের ফলে শিশুটির ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়, মলদার ও যৌনাঙ্গে ছিড়ে যায়। আটটি সেলাই করার পরও তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হয়। পরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এক বছর ঢাকায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছিল শিশুটি। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের আক্রান্তরা মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন।
কালিহাতী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, ধর্ষণের ঘটনায় ওই সময় ধর্ষক মাহবুবকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে ও আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
আরিফ উর রহমান টগর/এমএএস/জেআইএম