জাল সনদে বড় ভাইকে চাকরি দিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্তা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঝিনাইদহ জেলা কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার (এফও) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি ফান্ড তছরুপ, চুরি, প্রতারণা, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
শৈলকুপা থেকে পাঠানো একটি অভিযোগ পত্রের তদন্ত করতে গিয়ে তৌহিদুরের সীমাহীন দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সদস্য বিশিষ্ট গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের প্রশাসন-১ শাখার সাবেক সহকারী পরিচালক আইয়ুব হোসেন।
এ ঘটনায় একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নং ০৩/২০১৯। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত ৩৬৩ নং স্মারক সূত্রে জানা গেছে, জেলা কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার (এফও) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান ২০১৬ সালে শৈলকুপার নিজ ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৩ জন শিক্ষক নিয়োগ করেন। এর মধ্যে ৫ জনই তার আত্মীয়-স্বজন। এছাড়াও অধিকাংশ কেন্দ্রের মান ভালো না।
তৌহিদুর রহমান ফাজিলপুর জামে মসজিদের প্রাক প্রাথমিকে খালাতো ভাই নুর মোহাম্মদ ও মহেশপুর জামে মসজিদ ও মক্তবে আপন ফুপাতো ভাইকে নিয়োগ দিয়ে স্বজনপ্রীতি করেন। ২০১৬ সালে আরজিনা খাতুন নামে এক শিক্ষক মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের প্রাক প্রাথমিক কেন্দ্র থেকে সেচ্ছায় অবসর নিলে এফও তৌহিদুর ওই শিক্ষিকার নামে ভুয়া চেক তৈরি করে তার আপন বড় বোন কামরুন নাহার কনাকে প্রদান করেন।
এছাড়াও তিনি কোনো রিসোর্ট সেন্টার পরিদর্শন না করেই মাসে ১২ দিনের টিএডিএ বিল ও মোটরসাইকেলের জ্বালানি বাবদ সাড়ে ৫ বছরে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তার এসব দুর্নীতির কারণে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাকরি বিধিমালা ১৯৯৮ এর ৩৯ ক, খ এবং ৩৯ চ বিধিতে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও ব্যক্তিগত কোনো শুনানি প্রত্যাশা করেন কিনা তা জানাতে বলা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ফিল্ড অফিসার (এফও) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান নিজেই দোষ স্বীকার করেছেন। এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শৈলকুপার তমালতলা সাধারণ রিসোর্ট সেন্টারের লাইব্রেরিয়ান পদে এইচএসসি পরীক্ষার সনদ জাল করে তৌহিদুর রহমান তার বড় ভাই আসাদুজ্জামানকে চাকরি দিয়েছেন।
শৈলকুপা ডিএম কলেজ থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একজন শিক্ষার্থীর সনদ জাল করে তার ভাইয়ের নাম বসিয়ে দেয়া হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হেড অফিসের সহকারী পরিচালক আলমান হোসেন তদন্ত করে এসব তথ্য পেয়েছেন। তিনি তদন্ত করে দেখেছেন, অনলাইন বা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো রেজিস্টারে ২০১৬ সালে আসাদুজ্জামান নামে কেউ এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেননি।
ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিডি আব্দুল হামিদ তাকে বাঁচানোর জন্য বিশেষ মিশন নিয়ে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে ডিডি আব্দুল হামিদ এ খবর অস্বীকার করে বলেন, হেড অফিস থেকে তদন্ত করে ঝিনাইদহ জেলা কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার (এফও) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এর একটা কপি আমি পেয়েছি।
তিনি বলেন, সাধারণ রিসোর্ট সেন্টারের নিয়োগ কর্তা জেলা প্রশাসক। কোনো কোনো সেন্টারে দুর্নীতি বা জাল সনদে চাকরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। আমি কেবল হেড অফিসকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানাতে পারি। শৈলকুপার তমালতলা সাধারণ রিসোর্ট সেন্টারের লাইব্রেরিয়ান পদে এইচএসসি পরীক্ষার সনদ জাল করে চাকরিত তৌহিদুর রহমান তার বড় ভাই আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপরে জানাবেন বলেও জানান।
এমএএস/এমএস