রামদা ঠেকিয়ে জমি দখল করলেন যুবলীগ নেতা
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে রামদা নিয়ে ডোয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীর অন্যের জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১৫ জুন) বিকেলে উপজেলার মাজালিয়া বিলপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় হামলায় ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় সরিষাবাড়ী থানায় মামলা হলে যুবলীগ নেতা কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার মাজালিয়া বিলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের কাছ থেকে ১৯৫৩ সালে হাসড়া মাজালিয়া মৌজার ৬১ শতাংশ জমি সাফ কওলামুলে ক্রয় করে মনিরুদ্দিনের ছেলে মোজাফফর ও জনো শেখের পরিবার ভোগদখল করে আসছিল। ওই জমিতে বসতবাড়ি, পুকুর, কবরস্থান, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানর ছেলে আয়নাল হক ও নাতি মজনু মিয়া ওই জমি তাদের বাপ দাদার দাবি করে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। ওই জমিজমা নিয়ে কয়েক দফায় গ্রাম্য সালিশে দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মৃত মোজাফফরের ছেলে সাইফুল ইসলাম, আব্দুল কাদের, তোষর আলী, শফিকুল ইসলাম ও মৃত জনো শেখের ছেলে চান মিয়া, আলতাব হোসেন, তোতা মিয়া ও লাল চান মিয়া প্রকৃত ভূমি মালিক বলে প্রমাণিত হয়।
কিন্তু সালিশের ওই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে (১৫ জুন) শনিবার বিকেলে মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আয়নাল হক ও নাতি মজনু মিয়ার পক্ষে ডোয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কামাল হোসেন ও তার ভাই মিনহাজ আহম্মদ বক্স, মজিবর রহমান, হবিবর রহমান, আব্দুল মানান, ফারুক হোসেন, জয়নাল আবদীন, ফরিদ হাসান, আলী আকবর ও তাদের সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র, রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ৬১ শতাংশ জমি জবর দখল করেন। এক পর্যায়ে গরু ব্যবসায়ী তোষর আলীর বসতঘরে ঢুকে গরু বিক্রির প্রায় দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যান।
এছাড়া তারা করাত মিস্ত্রি সুজা মিয়া ও আব্দুল খালেককে দিয়ে ওই জমির বাগানের প্রায় অর্ধ শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটে নিয়ে যান। পরে জমিতে একটি ছাপড়া ঘর তুলে জমি দখল করেন।
এ সময় প্রকৃত জমির মালিক আলতাব হোসেন ও তার লোকজনরা বাধা দিতে গেলে যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন রামদা উচিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তাদের ওপর হামলা চালায় এবং মারপিট করেন। হামলায় আলতাব হোসেন (৪৫), রুবেল (২৪), কাদের (৪৫), তোতা (৩৮), চান মিয়া (৫০), ঝর্ণা (৩২), রওশনারা (৩৮), অনিক (১২), তকির (১৪) ও রিপন (১৩) গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহতদের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
হামলাকারীরা দাবি করছেন, ‘প্রতিপক্ষরাই মারপিট করেছে। জমি তাদের, তাই ঘরবাড়ি ওঠাতে এসেছেন। ওরাই বাধা দিয়েছে।’
এ ঘটনায় মাজালিয়া গ্রামের শাকিলা জামান চান বাদী হয়ে রোববার (১৬ জুন) সকালে যুবলীগ নেতা কামাল হোসেনসহ ২১ জনকে আসামি করে সরিষাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থানার উপপরিদর্শক ঈমান আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
তবে ঘটনার দিন হামলার সময় কামাল হোসেন ও তার সহযোগীদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রগুলো এ পর্যন্ত পুলিশ উদ্ধার করতে না পারলেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশের ওসি মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামি ও দেশীয় অস্ত্রগুলো উদ্ধারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আসমাউল আসিফ/এফএ/পিআর