ব্যারিস্টার সুমনের কাছে আমি কৃতজ্ঞ : নুসরাতের মা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরোয়ানাভুক্ত আসামি ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারে স্বস্তি পেয়েছে নুসরাতের পরিবার।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারের খবর শোনার পর নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মেয়ে হত্যার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার জন্য নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ব্যারিস্টার সুমনের করা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার হয়েছেন। আমি ব্যারিস্টার সুমনের কাছে কৃতজ্ঞ। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার সুমনসহ দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শিরিন আক্তার আরও বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়ের হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছেন। এটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে অসৎ উদ্দেশ্যে আমার মেয়ের ভিডিও ধারণ করেছেন ওসি। আমরা এর আগেও ওসি মোয়াজ্জেমের বিচার চেয়েছি। এখনো তার বিচার চাই। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
নুসরাতের বড় ভাই ও নুসরাত হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতকে তার অফিসে নিয়ে যেভাবে নাজেহাল করেছেন সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে গেছে।
নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেফতারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযোগ তা তদন্তের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করা হোক। সেই সঙ্গে ওসির সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরা।
নুসরাত হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে ওসি মোয়াজ্জেম অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন। নুসরাত হত্যা মামলার আসামিরা বেশিদিন পালিয়ে থাকতে পারেনি। পিবিআই ও পুলিশ তাদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করেছে। আমরা সঠিক বিচারের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের পরিবার থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি মেয়াজ্জেম অশ্লীলভাবে জেরা করে ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
১৫ এপ্রিল উচ্চ আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই দিন আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ২৯ জুন উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন ওসি মোয়াজ্জেম। এরপর থেকে ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক। তাকে ধরতে গ্রামের বাড়ি যাশোরের চাঁচড়া ও রাজধানীর সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ।
এর আগে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ১০ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। রোববার দুপুরে তাকে শাহবাগ থানাধীন হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নুসরাতকে নানাভাবে হুমকি দেয় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার লোকজন। মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের নির্দেশে ৬ এপ্রিল মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তার কয়েকজন সহপাঠী। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।
রাশেদুল হাসান/এএম/পিআর