১৮ বছর আগে বোমা হামলার টার্গেট ছিলেন শামীম ওসমান!
নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণিত ও ভয়াবহ একটি দিন ১৬ জুন। ২০০১ সালের এই দিনে চাষাঢ়ার শহীদ মিনারের পাশে আওয়ামী লীগের অফিসে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ২০ নিহত হন। দেশে আলোচিত অনেক হত্যা মামলার বিচার শেষ হলেও ১৮ বছরেও শেষ হয়নি এ বোমা হামলার বিচার কাজ।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি, সেদিনের বোমা হামলার মূল টার্গেট ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। দেশে প্রথমবারের মতো জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ও নারায়ণগঞ্জের মাটিতে জামায়াত ইসলামের সাবেক আমীর গোলাম আযমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করাই ছিল শামীম ওসমানের অপরাধ।
তবে এত বছরেও এই ঘটনার বিচার পাননি নিহতের স্বজনরা। অভিযোগ রয়েছে, এই বোমা হামলার ঘটনায় ১৮ বছর ধরে কেবল রাজনীতিই হয়েছে, বিচারের দাবিতে জোরাল কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কেউ।
বোমা হামলার ঘটনার পর দায়ের করা দুটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হলেও বিচারকার্য সম্পন্ন করা এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি। প্রতিবছর দিনটি ঘটা করে পালন করা ছাড়া আর কিছুই হয় না।
তবে সূত্র বলছে, চার্জশিট প্রদানের পর থেকে এখনও পর্যন্ত সাক্ষগ্রহণই শেষ করতে পারেনি। যার কারণে এই মামলার রায় প্রদান করা সম্ভব হয়নি ১৮ বছরেও।
অপরদিকে ১৬ জুন বোমা হামলার ঘটনায় নিহত ২০ জনের মধ্যে একজন নারীর পরিচয় আজও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। কে ছিলেন সেই নারী, তার হদিস এখনও পর্যন্ত জানাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ আওয়ামী লীগের কেউ।
২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। রাত পৌনে আটটার দিকে এমপি শামীম ওসমান যখন জনগণের সঙ্গে কথা বলছিলেন ঠিক তখন বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় আওয়ামী লীগের ২০ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক লোক। চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলার সভাপতি চন্দন শীল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন দাসসহ আরও অনেকেই।
ওই ঘটনায় সেদিনই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা দুটি মামলা (একটি বিস্ফোরক ও অন্যটি হত্যা) দায়ের করেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এ মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। দুটি মামলায় ১৪ বছরে ৭ বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হন। পরে ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২ মে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি ৬ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন আছে এবং তা সাক্ষী পর্যায়ে আছে। মামলার অন্যতম আসামি হুজি নেতা মুফতি হান্নানের একটি মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এবং তার প্রতিবেদন আদালতে জমা না দেয়ায় বার বার মামলার তারিখ পড়ছে।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, ১৬ জুনের বোমা হামলার ঘটনার প্রধান আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের বিরুদ্ধে সারাদেশে ৫১টি মামলা হয়। সে কারণে তাকে যথাসময়ে নারায়ণগঞ্জ হাজির করা যায়নি। ফলে বার বার সাক্ষ্য গ্রহণ পেছানো হয়। আর এতে করে মামলার দীর্ঘসূত্রিতাও বাড়ে।
তবে আমরা চেষ্টা করছি নারায়ণগঞ্জের বোমা হামলার মামলাটি যেন দ্রুত শেষ করা যায়। অচিরেই এর দৃশ্যমান কাজ পরিলক্ষিত হবে। আমরা চাই দ্রুত এ মামলার বিচার কাজ যেন শেষ হয়।
শাহাদাত হোসেন/এফএ/এমএস