নিজের স্ত্রীকে বোন পরিচয় দিতেন তিনি!
ফেসবুকে নিজেকে পরিচয় দিতেন মেজর হিসেবে। এরপরে লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন মেয়েদের। চাকরি দেয়ার কথা বলে গড়ে তুলতেন সম্পর্ক। বিভিন্ন কায়দায় হাতিয়ে নিতেন বড় অঙ্কের টাকা। গল্পটা এখানেই শেষ নয়।
মেয়ের বাড়িতে হাজির হতেন সশরীরে। হুট করেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিতেন। মেয়ে হিন্দু পরিবারের হলে, নিজেকে পরিচয় দিতেন হিন্দু ধর্মালম্বী বলেই। নিজের স্ত্রী মেঘলাকে বোন পরিচয় করিয়ে দিতেন ভুয়া মেজর জাহিদ ওরফে সুমির।
সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার এমন এক ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার (১৫ জুন) সকালে র্যাব-৪ এর একটি অভিযাত্রিক দল ব্যাংক কলোনী এলাকা থেকে সুমিরকে গ্রেফতার করে। তিনি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থানার বাসিন্দা। স্ত্রী মেঘলাকে নিয়ে টাঙ্গাইলের কালীহাতি থানার অস্তিপাড়া গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন।
ভুক্তভোগী নারী শ্যামলী রানী ববি জানান, গত বছরের ৩ আগস্ট মো. জাহিদের (সুমির) সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়। এ পরিচয়ের সূত্র ধরে কথা বলার এক মাস পর তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিচয়ের দুই মাস পরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় দেখা করেন তারা। এ সময় ভুক্তভোগীকে তার খালার বাসার পরিচয় দিয়ে জামগড়া এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যান জাহিদ। এক পর্যায়ে জাহিদ জানান, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজর এবং তার আসল নাম সুমির। সেইসঙ্গে নিজেকে হিন্দু পরিবারের সন্তান বলে পরিচয় দেন।
শ্যামলী জানান, জাহিদ আমাকে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেন। এর আগেও তিনি একাধিক মানুষকে চাকরি দিয়েছে। পরে জাহিদ আমার কাছ থেকে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ৩০ হাজার টাকা নেয়। সেই সঙ্গে জানায়, নিয়োগের পরে ৪ লাখ টাকা দিতে হবে। কিছুদিন পরে বিয়ে প্রস্তাব দিয়ে আমার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। বাসায় গিয়ে জাহিদ বাবাকে জানায় তার বাবা একজন পুলিশ কমিশনার এবং তিনি দেশের বাইরে থাকেন। এছাড়া জাহিদের মা একজন মানসিক রোগী। পরে জাহিদ নিজের স্ত্রী মেঘলাকে তার বোন পরিচয় দিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলায়। গত বছরের ২৫ অক্টোবর হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে আশুলিয়ায় বসবাস শুরু করি।
ভুক্তভোগী এ নারী আরও জানান, বিয়ের প্রায় ২০ দিন পরে শ্যামলী জানতে পারেন, জাহিদ (সুমির) হিন্দু নয় এবং তিনি সেনাবাহিনীর মেজর নয়। এর আগে জাহিদ সেনাবাহিনীর অফিসার পরিচয় দিয়ে ভোলা জেলার বোরানউদ্দিন থানার পক্ষিয়া গ্রামের আবু তাহের ব্যাপারীর মেয়ে মোছা. শাহানাজ বেগমকে (২২) প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে এবং তার বোনকে চাকরি দেয়ার নামে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে আত্নগোপন করেছে। আরও অনেক মেয়ের সঙ্গে জাহিদ একই প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করেছে।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম জানান, দুপুরে ভুয়া মেজর জাহিদকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে ভুক্তভোগী নারী ও পরিবার যোগাযোগ করে তাদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরছেন। পাশাপাশি ভুয়া মেজর জাহিদের স্ত্রী মেঘলাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ প্রতারণার সঙ্গে মেঘলা জড়িত রয়েছে। কারণ স্ত্রী মেঘলাকে প্রেমের ক্ষেত্রে ও অন্য নারীকে বিয়ের সময় তার বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিতেন জাহিদ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী শ্যামলী রানী ববি বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন।
মোহাম্মদ রনি খাঁ/এমএসএইচ