লাশবাহী গাড়ি আটকে পুলিশের চাঁদা দাবি!
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় লাশবাহী গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে চাঁদা না দেয়ায় গাড়িচালককে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহন শ্রমিক ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি পুলিশের শাস্তির দাবিতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন পরিবহন শ্রমিকরা। শনিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মতিগঞ্জ এলাকার রুবেল নামের এক ব্যক্তি শুক্রবার রাতে সিলেটের ওসমানীনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুবেলের লাশ একটি পিকআপভ্যানে (ঢাকা-মেট্রো-ন-১৫৭৩৮১) শ্রীমঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লাশবাহী পিকআপটি উপজেলার মতিগঞ্জের বটেরতল এলাকায় পৌঁছালে কাগজপত্র দেখার জন্য দাঁড় করান হাইওয়ে পুলিশের সাতগাঁও ফাঁড়ির ইনচার্জ নান্নু মণ্ডল।
ওই সময় গাড়িচালক ও লাশের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে চাঁদা দাবি করেন ইনচার্জ নান্নু মণ্ডল। চাঁদা না দেয়ায় চালককে মারধর করে লাশবাহী গাড়ি আটকে রাখেন তিনি।
খবর পেয়ে এলাকাবাসীকে নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।
লাশবাহী পিকআপের চালক শাকিবুল হাসান শাকিল বলেন, উপজেলার মতিগঞ্জের বটেরতল এলাকায় লাশ নিয়ে পৌঁছালে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নান্নু মণ্ডল প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কীসের লাশ? চুরির লাশ না মার্ডারের? পরে গাড়ির কাগজপত্র চেক করার পর পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় আমাকে মারধর করেন ইনচার্জ নান্নু মণ্ডল।’
ট্রাক ও ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহাজান মিয়া বলেন, ইনচার্জ নান্নু মণ্ডলের চাঁদাবাজির মাত্রা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। আজ তিনি লাশবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করতে চেয়েছেন। যে কাজটি তিনি করেছেন তা অমানবিক। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে হাইওয়ে পুলিশের সাতগাঁও ফাঁড়ির ইনচার্জ নান্নু মণ্ডল বলেন, একটি পিকআপে অতিরিক্ত মালের সঙ্গে কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। বৃষ্টির মধ্যে গাড়িটি আটকালে তারা আমাকে জানায় একজন ড্রাইভারের জানাজায় যাচ্ছেন। আমি তাদের বলি এভাবে গেলে যেকোনো সময় আপনাদেরও জানাজা পড়া লাগবে। তাদের ঝুঁকি নিয়ে যেতে দেইনি আমি।
তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের মূল দায়িত্ব নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা। এ কাজ করতে গিয়ে আমরা নানা ধরনের যানবাহন আটকে রাখি। এসব গাড়ি না ছাড়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালেক বলেন, শ্রমিকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন। তবে যে পিকআপটি আটকানো হয়েছিল সেটি সবজিবাহী, তাতে কোনো লাশ ছিল না। সড়ক অবরোধের পর আমি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আমার আশ্বাস পেয়ে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।
রিপন দে/এএম/এমএস