ঝালকাঠিতে কোরবানির পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে বিষাক্ত ওষুধ
কোরবানি উপলক্ষে অধিক মুনাফার লোভে গরু মোটাতাজা করণে বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব গরুর মাংস খেলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, গরু মোটাতাজা করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। এ পদ্ধতিতে ইউরিয়া, চিটাগুড়, ধানের খড় মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। গরু মোটাতাজা করার জন্য চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে। লোভী ব্যবসায়ীরা তিন সপ্তাহ থেকে দুই মাসের মধ্যে গরু মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করছেন।
এগুলো হলো, নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ইউরিয়া, স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ ডেকাসন, ওরাডেক্সন , প্রেডনিসোলন, বেটনেনাল, কর্টান, স্টেরন, অ্যাডাম-৩৩ ইত্যাদি ট্যাবলেট এবং ডেকাসন, ওরাডেক্সন, অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ইনজেকশন।
এছাড়া সিপ্রোহেপটাডিন যেমন- পেরিঅ্যাকটিন ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য গরুর শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়। গরুর ক্ষুধা ও পিপাসা বেশি হয়। এতে গরু প্রচুর পরিমাণে খাদ্য ও পানি খেতে থাকে।
অন্যদিকে ওষুধ ও রাসায়নিকের প্রভাবে গরুর শরীরে পানি ও তরল পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এসব মিলিয়ে অতিদ্রুত গরুকে মোটা দেখাতে থাকে। এই গরুগুলো বেশিদিন বাঁচেও না।
অস্বাভাবিকভাবে মোটা করা এসব গরু নির্জীব ও শক্ত হয়ে যায়। এদের ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়। আচরণে অত্যন্ত ক্লান্তিভাব দেখা যায়। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মাস কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, গরুর মাংস থেকে ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ মানব শরীরে প্রবেশ করে। এসব গরুর মাংস খাওয়ার ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যমান উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। যাদের রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা বিপদসীমার কাছাকাছি, তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
সচেতনরা বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে পশু খামার এবং পশুর হাটে নিয়মিত মনিটরিং ও মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের আইন অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে বছরব্যাপী পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, স্থলবন্দরে আমদানিকৃত গরু পরীক্ষা, পশুর হাটে পশু চিকিৎসকের টিম দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এমজেড/পিআর