জেলার সোহেল রানার ব্যাংকে ১৫ কোটি টাকা
চট্টগ্রামের সেই জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস, তার স্ত্রী-সন্তান ও শ্যালকের ২৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে দুদক। এসব ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ১৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও যশোরের বিভিন্ন ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় এসব টাকার হিসাব রয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে, গত কয়েকদিন আগে এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আবার পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দুদক অফিস সূত্রে জানা গেছে।
বর্তমানে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় ময়মনসিংহ দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক সাধনচন্দ্র সূত্রধরকে। এর আগে এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং পরে দায়িত্ব দেয়া হয় দুদকের উপ-পরিচালক ফারুক আহমেদকে। মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য বারবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দুদক।
জব্দ করা ২৬টি ব্যাংক হিসাবে ১৫ কোটি টাকা লেনদেনের সন্ধান পেয়েছে দুদক। তবে সঠিক হিসাব পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে দুদকের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২টি ব্যাংকের হিসাববিবরণী তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে পৌঁছেছে বলে জানান মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা।
জেলার সোহেল রানা, তার স্ত্রী-সন্তান ও শ্যালকের নামের ব্যাংক হিসাব জানতে দুদকের কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলে ২৬টি ব্যাংক হিসাবের তালিকা পাঠায়। তারপর কিশোরগঞ্জ আদালতের অনুমতিক্রমে ওই হিসাবগুলোর লেনদেন জব্দ করে দুদক।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার ব্যাংক এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ ভৈরব রেলওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ওই দিন চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনে ময়মনসিংহে যাওয়ার পথে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন বিরতির সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।
এ সময় টাকার উৎস জানাতে না পারায় তার বিরুদ্ধে ভৈরব রেলওয়ে থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। এরপর মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটি রেলওয়ে পুলিশ তদন্ত করে ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ আদালতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়।
অপরদিকে, মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ময়মনসিংহ দুদকে তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। গত আট মাস ধরে মামলাটির তদন্ত চলছে। ঘটনার পরপর সোহেলকে কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে এবং ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তার কাছ থেকে জব্দ করা ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা কিশোরগঞ্জের সরকারি ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।
অপরদিকে, জেলার গ্রেফতারের দুইদিন পরই জব্দ আড়াই কোটি টাকার এফডিআরের মধ্যে এক কোটি টাকা তার শ্যালক ও স্ত্রী ময়মনসিংহের দুটি ব্যাংক থেকে প্রতারণার মাধ্যমে উত্তোলন করেন।
এক কোটি টাকা তার স্ত্রী ও শ্যালক কোথা থেকে পেলেন এবং টাকার উৎস কী? তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে বলে জানা যায়। জেলার গ্রেফতার হওয়ার পর নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতে একাধিকবার জামিন চাইলেও জামিন দেয়া হয়নি। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ কারাগারে বন্দি আছেন সোহেল রানা। অভিযোগ রয়েছে কারাগারে জেলার সোহেল রানা জামাই আদরে বন্দি জীবন-যাপন করছেন।
যদিও এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের পৃথক তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে আর ৪৮ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে, যার তদন্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ময়মনসিংহ দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক সাধনচন্দ্র সূত্রধর বলেন, জেলার সোহেল রানা, তার স্ত্রী-সন্তান ও শ্যালকের ২৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে আরও ৪৮ জনের সম্পৃক্তার বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি পেতে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি মাত্র কয়েকদিন হলো। মামলাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষীর বক্তব্য নিতে হচ্ছে। তাই মামলাটির চার্জশিট আদালতে জমা দিতে আরও দুই মাস সময় লাগতে পারে।
কারা মহাপরিদর্শক কার্যালয়ের ডিআইজি (প্রিজন) মো. বজলুর রহমান বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ৪৮ জনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। তিনি বলেন, যেকোনো তদন্তের বিষয়টি গোপনীয়। তাই এ ব্যাপারে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/পিআর