যাত্রীকে পিষে হত্যা, বাস চালকের পর কন্ডাক্টরকেও ধরল পুলিশ
বাস ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে গাজীপুর সদরের বাঘের বাজার এলাকায় বাস থেকে ফেলে এক যাত্রীকে চাকায় পিষ্ট করে হত্যার পর সোমবার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে আলম এশিয়া বাসচালককে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাসচালকের নাম রোকন উদ্দিন (৩৫)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার লতিফপুর নয়াপাড়া এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে। সোমবার বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সোমবার রাত ৮টার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে ওই বাসের কন্ডাক্টর মো. আনোয়ার হোসেনকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানা পুলিশের এসআই আব্দুর রহমান বলেন, রোববার সকালে আলম এশিয়া পরিবহনের এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে চাকায় পিষ্ট করে হত্যার পর বাসচালক ও সহকারীদের আসামি করে জয়দেবপুর থানায় হত্যা মামলা করা হয়। পরে চালক ও সহযোগীদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। ঘটনার পর বাসচালক রোকন উদ্দিন তার মাকে নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউরা ও হালুয়াঘাট থানার সীমান্ত এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নেয়। পরে সোমবার দুপুরে ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযানে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রোকন উদ্দিন কংস নদীতে ঝাঁপ দেয়। পুলিশও তখন কংস নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। তার মা কৌশলে আত্মগোপন করে পালিয়ে যান। যাত্রী সালাহ উদ্দিন হত্যার ঘটনায় জড়িত বাসের অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
নিহত বাস যাত্রী সালাহ উদ্দিন (৩৫) স্থানীয় আতাউর রহমান মেম্বার বাড়িতে ভাড়া থেকে স্কটেক্স অ্যাপারেল নামের পোশাক কারখানার গাড়ি চালাতেন। তিনি ঢাকার আলুবাজার এলাকার মৃত শাহাব উদ্দিনের ছেলে।
এদিকে বাসচালককে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যমতে সোমবার রাত ৮টার দিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে কন্ডাক্টর আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
নিহতের স্ত্রী পারুল আক্তার জানান, শুক্রবার ঈদের ছুটিতে স্বামীকে নিয়ে ময়মনসিংহে বাবার বাড়ি যান। রোববার সকালে স্বামীকে নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজারের ভাড়া বাড়িতে ফিরতে ময়মনসিংহ থেকে ‘আলম এশিয়া’ বাসে ওঠেন।
পথে বাসের ভাড়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বাসের ভেতরেই স্বামী সালাহ উদ্দিনকে মারধর করেন বাসের হেলপার। মারধরের ঘটনাটি মুঠোফোনে বাঘের বাজার এলাকার স্বজনদের অবহিত করেন সালাহ উদ্দিন। বাসটি বাঘের বাজারে পৌঁছালে সালাহ উদ্দিন নেমে বাসের গতিরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় সালাহ উদ্দিনকে চাপা দিয়ে চালক দ্রুতগতিতে বাসটি নিয়ে ঢাকার দিতে চলতে থাকেন।
পারুল আক্তার বলেন, সালাহ উদ্দিন যখন গাড়ি থেকে নেমে যান তখন আমি নামতে চাইলে হেলপার বাধা দেন। পরে আমাকে নিয়ে বাসটি চলতে শুরু করে। এ সময় কান্নাকাটি শুরু করলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া ফু-ওয়াং কারখানার সামনে নিয়ে বাসের গতি কমিয়ে আমাকে ফেলে দেন হেলপার।
মো. আমিনুল ইসলাম/এএম/পিআর