চার ইউনিয়নবাসীকে ভোগাচ্ছে একটি ভাঙা সেতু
সড়কটিতে ছিল একটি পাকা সংযোগ সেতু। ওই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন নিয়ে চলাচল করত চারটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। পাঁচ বছর আগে বন্যার পানির তোড়ে সেতুটি বিধ্বস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দুই দফায় কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। এই সাঁকো দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে না পারলেও মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করত। সপ্তাহখানেক আগে সেই সাঁকোও ভেঙে যায়। ফলে ওই সাঁকো দিয়ে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় মানুষের চলাচল। জনদুর্ভোগের এই সেতুটি অবস্থিত শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের আলিবক্স মাদবরকান্দি গ্রামে।
জাজিরা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলা সদর থেকে পালেরচর বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ইটের সড়ক। যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ওই সড়কের বড়কান্দি ইউনিয়নের আলিবক্স মাদবরকান্দি গ্রামে খালের ওপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। তখন ওই সড়কটি ব্যবহার করে বড়কান্দি, পালেরচর, পূর্ব নাওডোবা ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ উপজেলা সদর ও জেলা সদরে যাতায়াত করতে থাকে। ২০১৪ সালে বন্যার পানির তোড়ে সেতুটি ধ্বসে যায়। ফলে ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পায়ে হেঁটে চলাচলা করার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই স্থানে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে সেটিও ভেঙে যায়। এরপর আবার বাঁশ দিয়ে সাঁকোটি সংস্কার করা হয়। গত আট দিন আগে সেই সাঁকোটি আবার ভেঙে যায়। সেতুটি সংস্কার না করায় ওই ২০টি গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
আলিবক্স মাদবরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সুজন মাদবর বলেন, সেতুটি ভেঙে গেছে পাঁচ বছর হলো, এখনও পুনর্নির্মাণ বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। অথচ এই সড়কটি দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। আমরা কৃষক, চরের মানুষ, এই কারণেই কী এত অবহেলা?
মুন্সিকান্দি গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, সেতুটি ভাঙা থাকায় চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। গ্রামের কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নেয়া যায় না। এ কারণে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
চেরাগ আলী সরদারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, একটি সেতুর কারণে সড়কটি অচল। পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। গ্রামবাসীর সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় অসুস্থ রোগী নিয়ে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য অনেক অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্ত এলজিইডির কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। দুই দফা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাঁকো নির্মাণ করে দেয়া হয়েছিল। এখন উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে কাঠের পোল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী বিমলেন্দু রায় বলেন, উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল হতে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাঠের পোল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সে অনুযায়ী টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ করছেন না। ৩০ জুনের মধ্যে ঠিকাদার কাজ শুরু না করলে পুনরায় সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।
মো. ছগির হোসেন/এমবিআর/এমএস