ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ফাগুনের ফোন, ল্যাপটপ, আইডি কার্ড কোথায়?

জেলা প্রতিনিধি | জামালপুর | প্রকাশিত: ০৮:৪৩ এএম, ০৬ জুন ২০১৯

দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও উদঘাটিত হয়নি তরুণ সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের মৃত্যু রহস্য। গত ২১ মে জামালপুর সদরের রানাগাছা ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের রেল লাইনের পাশ থেকে ফাগুনের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে থানা পুলিশ। ট্রেন থেকে পড়ে ফাগুনের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করলেও তার পরিবারের দাবি ফাগুনকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে রেল লাইনের পাশে আহত অবস্থায় ফাগুনকে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে বাচাঁনোর চেষ্টা করে, তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

চোখে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে একুশ বছরের তরুণ ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন এক অপার সম্ভাবনার আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। তেজগাঁও কলেজে ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে ২য় বর্ষে পড়াশুনার পাশাপাশি শুরু করেন সাংবাদিকতা। প্রয়াত দাদা আব্দুর রাজ্জাক আর বাবা শেরপুরের এনটিভির সাংবাদিক কাকন রেজার পথ অনুসরণ করে জাতির বিবেক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মহান ব্রত নিয়ে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা পেশাকে। প্রায় এক বছর আগে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ইংরেজি ভার্সনে সাবএডিটর হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ফাগুন। অল্পসময়ে কাজের দক্ষতা আর মিষ্টি ব্যবহার দিয়ে সবার প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

গত ২১ মে কমিউটার ট্রেনে জামালপুর হয়ে শেরপুরে বাড়ি ফিরছিলেন। ময়মনসিংহ আসার আগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে আধঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে মা আর বাবার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় ফাগুনের। ফোনে কথা বলার সময় ফাগুনের কথাগুলো ঘুমে জড়িয়ে আসছিল বলে জানান তার মা-বাবা। তারপর থেকেই বন্ধ পাওয়া যায় ফাগুনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি।

ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে জামালপুর সদরের রানাগাছা ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে রেল লাইনের পাশে ফাগুনকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দা জলিল মিয়া। রেললাইনের পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় তার পায়ে কিছু একটা ধাক্কা লাগে। কলা গাছের গুড়ি ভেবে পা দিয়ে আবারও ধাক্কা দিলে গোঙানোর শব্দ পেয়ে লোকজন ডেকে আনেন জলিল।

এ সময় ফাগুন জীবিত ছিলেন। পরে লোকজন তাকে রেল লাইনের পাশ থেকে উঠিয়ে পাশের খোলা জায়গায় এনে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। ফাগুনকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্থানীয় লোকজন নিজেরাই টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি মারা যান বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এরপর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে ফাগুনের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে থানা পুলিশ।

পরদিন ২২ মে দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিচয় না পেয়ে দাফনের জন্য আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে ফাগুনের লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের আগে সুরতহালের সময় ফাগুনের চোখের উপর, মাথার পেছনে এবং গলার শ্বাস নালিতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।

এদিকে রাতে ছেলে বাড়ি ফিরে না আসায় শেরপুর এবং ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ শুরু করেন ফাগুনের বাবা-মা। বেলা ৩টার দিকে নিখোঁজ ছেলের খোঁজ করতে জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাবা কাকন রেজা। এ সময় ছবি দেখে সন্তানের মরদেহ সনাক্ত করেন তিনি।

পর অজ্ঞাত পরিচয়ে ফাগুনের লাশ দাফন স্থগিত করে দেয় পুলিশ। ২৪ ঘণ্টা সময় না যেতেই ফাগুনের লাশ তড়িঘড়ি করে দাফনের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে পুলিশ জানায়, শুধু ফাগুন নয়, হিমাগার না থাকায় যেকোনো বেওয়ারিশ মৃতদেহ এভাবেই দাফন করতে হয় তাদের। তবে দাফনের পূর্বে পিবিআইয়ের মাধ্যমে মৃতের আঙুলের ছাপ ও ছবি তুলে রাখেন তারা।

অপরদিকে এ ঘটনার দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও উদ্ধার হয়নি ফাগুনের সঙ্গে থাকা মোবাইল, ল্যাপটপ ও আইডি কার্ড। এসব জিনিস উদ্ধার হলে ফাগুনের মৃত্যু রহস্যের জট খুলবে বলে মনে করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

ছেলের মৃত্যুর শোক এখনও কাটেনি তরুন সাংবাদিক ফাগুনের মায়ের। ছেলেকে হারিয়ে তার ব্যবহৃত জিনিস বুকে নিয়ে দিন কাটছে তার। ফাগুনের মা মিলি রেজা জানান, ছেলের সঙ্গে যখন তার মোবাইলে কথা হয় সে সময় তিনি ট্রেন কিংবা বাসের কোনো শব্দ পাননি। তবে ছেলের কথাগুলো জড়িয়ে আসছিল।

তিনি বলেন, আর কোনো মা যেন সন্তান হারা না হয়, সেজন্য আমার সন্তানের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নিহত ফাগুনের বাবা সাংবাদিক কাকন রেজা জানান, ট্রেন থেকে পড়ে কারো মৃত্যু হলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত থাকে, কিন্তু ফাগুনের গলা এবং মাথার পেছনে ছাড়া কোথাও ক্ষত ছিলো না। ফাগুনকে ট্রেন থেকে নামিয়ে হত্যা করা হতে পারে। সন্ধ্যায় মোবাইলে কথা বলার সময় ফাগুনের কথা জড়িয়ে আসছিল। তিনি ভেবেছিলেন সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের পর হয়তো ঘুম পাওয়ায় এমন হচ্ছিলো। এটাই ছেলের সঙ্গে তার শেষ কথা। গত ২৫ মে বাদী হয়ে জামালপুর রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।

জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র পন্ডিত জানান, কমিউটার অথবা যমুনা ট্রেন থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ল্যাপটপ ও মোবাইল ছিনিয়ে নিতেই কোনো চক্র তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে থাকতে পারে। ফাগুনের শরীরে কয়েকটি ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। দুলাল নামে কমিউটার ট্রেনের টিকিট চেকারকে যাত্রীরা ছাদ থেকে একজনকে পড়ে যাওয়ায় বিষয়টি জানিয়েছিল। আমরা তাকেও ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এছাড়াও সন্দেহজনক হিসেবে ছিনতাই চক্রের সদস্য রবিউল ইসলাম পাংখা নামে একজনকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছি।

ফাগুনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান রেলওয়ের এই পুলিশ কর্মকর্তা।

আসমাউল আসিফ/এফএ/এমএস

আরও পড়ুন