‘নুসরাতের মতো পুড়িয়ে মারব’ যুবলীগ নেত্রীকে ছাত্রলীগ নেতা
নাজমা খাতুন নামে মহিলা যুবলীগের এক ওয়ার্ড সভাপতিকে নুসরাতের মতো আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন খুলনার কয়রা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন।
আল আমিনের মামাদের সঙ্গে যুবলীগ নেত্রী নাজমার পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার বাড়িতে গিয়ে এ হুমকি দিয়েছেন বলে আশাশুনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন নাজমা খাতুন।
এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে নাজমা খাতুন নিজের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে যুবলীগ নেত্রী নাজমা খাতুন বলেন, আল আমিন ছাত্র শিবির থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। নিজের ভাইকে দিয়ে সুন্দরবনে ডাকাত দল পরিচালনা, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে বাড়িছাড়া ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ করছেন।
নাজমা খাতুন জানান, তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মহিলা যুবলীগের সভাপতি। নাজমার পরিবারের ওয়ারিশসূত্রেপ্রাপ্ত সম্পত্তি আল আমিনের মামারা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ভোগ করছেন। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। আল আমিনের প্রভাবে তার মামারা ২০ মে নাজমার পরিবারের সদস্যদের কুপিয়ে জখম করলে ২৩ মে আশাশুনি থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলার পর থেকে আল আমিন বেপরোয়া আচরণ ও হুমকি- দিচ্ছেন নাজমাকে।
নাজমা বলেন, ২৮ মে সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, তার মামাতো ভাই আল আমিন হোসেন ও মামা ফারুক হোসেন ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল নিয়ে হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে হাজির হন। এ সময় তাদের দেখে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে তারা বাইরে থেকে হুমকি দেন। তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা তুলে না নিলে আমাকে অপহরণ ও হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে। ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে আমি, আমার স্বামী-সন্তান ও পরিবারের সবাইকে ভাড়িছাড়া করবে বলে দেয় তারা।
ওই সময় ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন বলেন, ‘তোকে ফেনীর নুসরাতের মতো আগুনে পুড়িয়ে মারব। তোর কোন বাপ আছে ঠেকাতে বলিস। নুসরাতকে তো আগুন লাগানোর আগে হত্যা করেনি, তোকে আগে টুকরা টুকরা করে তারপর আগুনে পুড়িয়ে মারব। পরে তোর লাশের ছাইও পাওয়া যাবে না, গুম করে দেব।’
আল আমিনের বিরুদ্ধে ছাত্র শিবির থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ করে নাজমা বলেন, আল আমিন ২০০৮ সাল পর্যন্ত কয়রা সুন্দরবন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্র শিবিরের কর্মী ছিলেন। তার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জড়িত। অনুপ্রবেশ করে একমাত্র আল আমিন আওয়ামী পরিবারের একটি পদ পান।
নাজমার মামলার ১ নং আসামি মো. আবুল হোসেন চিহ্নিত জামায়াত কর্মী, ৩নং আসামি ফারুক হোসেন বিএল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও ৬ নং আসামি আল আমিন শিবির কর্মী ও সাঈদী মুক্তি পরিষদের গোকুলনগর গ্রামের সভাপতি।
নাজমা খাতুন বলেন, জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় থেকেও আমার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি নিজে মহিলা যুবলীগের রাজনীতি করি। আমার ননদ ফিরোজা বেগম (সালমা) সাতক্ষীরা সদরের বকচরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও ননদের স্বামী আব্দুল ওহাব আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সহ-সভাপতি।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক আল আমিন বলেন, গত তিন বছর আমি নাজমাদের বাড়িতে যাইনি। জমিজমা নিয়ে মামা-খালাদের মধ্যে সমস্যা আছে। সেখানে আমার যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। নাজমা সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছে তা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের খুলনা জেলা সভাপতি পারভেজ হাওলাদার বলেন, আমরা এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আলমগীর হান্নান/এএম/এমএস