নওগাঁয় যানজট নিরসনে ছোট যমুনায় নৌরুট
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর শহরে বাড়ছে মানুষ। আর মানুষের যোগাযোগের জন্য বাড়ছে বিভিন্ন যানবাহন। ফলে গত ১০ বছরে শহরে কয়েকগুন মানুষ এবং যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাট রয়েছে আগের মতই। নতুন কোনো রাস্তা তৈরি এবং প্রস্তুত না হওয়ায় বর্তমানে বাড়ছে যানজট। এতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে বাড়ছে ভোগান্তি।
শহরে যানজট নিরসন এবং মানুষের ভোগান্তি কমাতে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন। নওগাঁ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীতে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তির হাত থেকে মানুষ রক্ষা পাবে অপরদিকে কিছু টাকাও সাশ্রয় হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ডিগ্রির মোড় পারঘাটে ছোট যমুনা নদীতে নৌরুট ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর প্রথম নৌযানটি ৩১ জন যাত্রী নিয়ে ডিগ্রির মোড় পারঘাট থেকে কালীতলার উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন।
এ সময় জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, নওগাঁ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. একেএম ফজলে রাব্বী (বকু), পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান ও উত্তম কুমার রায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিক, উপজেল নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান ইলিয়াস তুহিন রেজা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষাণসহ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, নওগাঁ সরকারি কলেজ (ডিগ্রির মোড়) থেকে শহরের ভিতর দিয়ে কালীতলার দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। রিকশাযোগে ডিগ্রির মোড় থেকে কাজীর মোড়, মুক্তির মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও গোস্তহাটির মোড় হয়ে কালীতলা যেতে হয়। অপরদিকে ডিগ্রির মোড় থেকে কেডির মোড়, হোটেল পট্টি, চুরিপট্টি থেকে গোস্তহাটির মোড় হয়ে কালীতলা যেতে হয়। অথবা ডিগ্রির মোড় থেকে কেডির মোড়, ফুলপট্টি, লিটন ব্রিজের মোড়, ডাবপট্টি হয়ে কালীতলা যেতে হয়। কাজীর মোড়ে কয়েকটি কেজি ও ন্যাশনাল স্কুল, কেডির মোড়ে কেডি স্কুল ও দুইটি বালিকা বিদ্যালয় ছুটির সময় রাস্তায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়।
এছাড়া হোটেল পট্টি, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, গোস্তহাটির মোড়, ডাবপট্টিতে প্রায় সময় যানজট লেগেই থাকে। এতে করে ডিগ্রির মোড় থেকে শহরের ভেতর দিয়ে কালীতলা যেতে সময় লাগে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। আবার ভাড়াও লাগে প্রায় ৪০-৫০ টাকা। কিন্তু নদীপথে ডিগ্রির মোড় পারঘাট থেকে কালীতলার ঘাট পর্যন্ত দুরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। ডিগ্রির মোড় থেকে কালীতলার ঘাট পর্যন্ত একজন যাত্রীর ভাড়া ১৫ টাকা এবং সময় লাগবে মাত্র ১০-১৫ মিনিট।
এর মাঝখানে লিটন ব্রিজ ঘাটে মধ্যবর্তী স্টপেজ থাকবে। আবার কালীতলা কিংবা ডিগ্রির মোড়ে উঠে লিটন ব্রিজে নামলে ভাড়া দিতে হবে ১০ টাকা। এতে করে মানুষ সহজেই শহরে প্রবেশ করতে পারবে। আবার মানুষ কয়েকটি স্থান ও বাজার এলাকার যানজট এড়িয়ে ডিগ্রি মোড় থেকে কালীতাল পর্যন্ত যেতে পারবে। দুইটি যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করবে। প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৩০ জন যাত্রী। জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নওগাঁবাসী।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন বলেন, আমরা শহরে যানজট সৃষ্টি না করে নদীপথ ব্যবহার করতে পারি। যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হবে। শুরুতে মানুষ নৌকায় হয়ত নাও চড়তে পারে। তারপরও থেমে না গিয়ে চালিয়ে যেতে হবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা শুধু কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে নদীকে নিয়ে একটি রেজুলেশন করেছি। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নদীকে খনন এবং নদীর পাড়গুলোতে অবকাঠামো তৈরি করে দৃষ্টিনন্দন করা হবে।
আব্বাস আলী/এফএ/এমএস