ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বঙ্গবন্ধু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পুরস্কার পাচ্ছে ৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

জেলা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ০২:৩৫ এএম, ২৯ মে ২০১৯

তিন ক্যাটাগরিতে তিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৯’ পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মিহির কুমার দো।

এ বছর ক্যাটাগরি (ক) ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, খ্যাতিমান গবেষক, বিজ্ঞানী, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদী ব্যক্তি ও গণমাধ্যমকর্মী বা ব্যক্তিত্ব’ পুরস্কার পাচ্ছেন বন্যপ্রাণীর মা-খ্যাত সদ্যপ্রয়াত তানিয়া খান (মরণোত্তর)।

ক্যাটাগরি (খ) ‘বন্যপ্রাণী বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বেনজির আহমেদ।

এবং ক্যাটাগরি (গ) ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান’ পুরস্কার পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাখিবাড়ি এবং পাখিবাড়ি সংরক্ষণ কমিটির বিদ্যুৎ কান্ত দাস।

নীতিমালা অনুযায়ী পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দুই ভরি (২৩.৩২ গ্রাম) ওজনের স্বর্ণের বাজারমূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ, ৫০ হাজার টাকার চেক ও সনদপত্র দেয়া হবে।

বিরল, বিপদাপন্ন, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী প্রজাতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১০ সালে প্রথম এ জাতীয় পুরস্কার চালু করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

তানিয়া খান

‘বন্যপ্রাণীর মা’ খ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক, ফটোগ্রাফার এবং সোল (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ) এর প্রতিষ্ঠাতা তানিয়া খান। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মৌলভীবাজার ও সিলেট বিভাগ জুড়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণে স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও সেবক তানিয়া খান। বন্যপ্রাণীর প্রতি ভালোবাসায় ২০০৬ সাল থেকেই বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতেন।

২০০৯ সালে বন বিভাগের শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের রেঞ্জার মুনীর আহমেদ খানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ছোটবেলা থেকে তার মধ্যে যে প্রাণীপ্রেম ছিল, বন কর্মকর্তার সঙ্গে বিয়ে তা নতুন মাত্রা এনে দেয়। বিয়ের পর কখনো মুনীর আহমেদ খানের সঙ্গে, কখনো একা, কখনো অন্যদের সঙ্গে দলবেঁধে স্থানীয় বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মতো বিশাল এলাকায় শুরু হয় তার বিচরণ।

তিনি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন ফর ন্যাচার) বাংলাদেশ এবং নিসর্গসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব কর্তৃক পরিচালিত বার্ড রিংগিং প্রোগ্রাম, জলচর পাখি গণনা কার্যক্রমে অনেক বছর যাবৎ যুক্ত ছিলেন।

২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাইড ওয়ার্টি ফ্রগ, বুশ ফ্রগ, হিল ব্লু ফ্লাইক্যাচার, ট্রিসট্রাম’স বান্টিং, চিকিলা ফুলেরি ফলস কোবরা, হিমালয়ান মোল, বামন মাছরাঙা প্রভৃতি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। ২০০৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তুলেছেন অসংখ্য বন্যপ্রাণীর ছবি।

তানিয়া খান Species Red List of Bangladesh-২০১৫ এর উভচর, সরীসৃপ, পাখি এবং প্রজাপতি বিষয়ক একজন এসেসর হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৫ সালে স্বামী মারা গেলেও তিনি বন্যপ্রাণীর প্রেমে মৌলভীবাজারে থেকে যান। সন্তানরা তাদের কাছে নিতে চাইলে তিনি বন্যপ্রাণীর সেবার জন্য থেকে যান। তিনি বলতেন, আমার সন্তানরা সাবলম্বী কিন্তু অন্য সন্তানরা (বন্য প্রাণিগুলা) অবলা তাদের সেবা করতেই মৌলভীবাজার থাকব।

২০১৬ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে মৌলভীবাজারের নিজ বাসায় ‘সোল (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ) ’ নামে একটি বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন, যার পরিচালক ছিলেন তিনি নিজেই। এই সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে আহত ও অসুস্থ বন্যপ্রাণীদের পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে তাদের নিজ আবাসস্থলে অবমুক্ত করা হতো। এখন পর্যন্ত ৩০-৩৫ প্রজাতির ৫ হাজারের অধিক পাখি এবং ৮-৯ প্রজাতির ৪ শতাধিক বন্যপ্রাণীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন নিজের স্বেচ্ছাশ্রমে।

তানিয়া খানের লেখা প্রায় ১৫ টি গবেষণা নিবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার চারটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ Big birder Award-2015, Bangladesh Biodiversity Conservation Fedaration Award -2017, Tree Fair Award-2017 পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

বেনজীর আহমেদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বেনজীর আহমদ। ১৯৮৪ সাল থেকে সরীসৃপ, ডলফিনসহ নানা ধরনের সিটাশিয়ান প্রজাতি সংরক্ষণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সুন্দরবনের ডলফিনের উপর তার ১২ বছরের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১২ সালে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। বিরল অলিভ রিডলে কচ্ছপের প্রজনন বিষয়ক গবেষণায় তার অবদান উল্লেখযোগ্য।

তার ১৬টি গবেষণা নিবন্ধ দেশি-বিদেশি নানা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ডলফিন সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছেন এবং গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি দেশের অভ্যন্তরে ২টি ও ভারতে ১টি এম.ফিল এবং ২টি পিএইচডি থিসিস তত্ত্বাবধান করেছেন।

বিদ্যুৎ কান্ত দাস

হাল্লা পাখিবাড়ি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কমিটির জন্য মনোনীত হয়েছেন বিদ্যুৎ কান্ত দাস। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরের পূর্ব পাশে হাল্লা গ্রামে এই পাখিবাড়ি।

বিগত ২০ বছর ধরে প্রায় এক একর আয়তনের হাল্লা পাখিবাড়ির গাছে গাছে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে উঠেছে। হরেক জাতের পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিশীবক, সাদাবক, পানকৌড়ি, জলকুড়া, সরালিসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির বাস। কয়েক বছর ধরেই প্রায় হাজার পাঁচেক পাখির বাস এই বাড়িতে।

প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে যখন পরিযায়ী পাখি আসে, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য পাখি হাওরের বিভিন্ন বিল ও জলাশয় থেকে এসে আশ্রয় নেয় বাড়ির গাছগাছালিতে। প্রতি বছর অনেক আর্থিক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও দেশীয় প্রজাতির নানা ধরনের পাখিসহ পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে কমিটির সদস্যগণ একান্ত সচেষ্ট।

হাল্লা গ্রামে পাখিবাড়ির নিজস্ব জমিতে কমিটির সদস্যরা নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দেশীয় প্রজাতির নানা ধরনের পাখিসহ পরিযায়ী পাখির এই আবাসস্থল সংরক্ষণে কাজ করে আসছে।

জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান হিসেবে দেশীয় ও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণে বিভিন্ন সময় এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে এই কমিটি এবং বিদ্যুৎ কান্ত দাস।

রিপন দে/বিএ/এফএ/পিআর