বোনের শরীরে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে ভিক্ষায় নেমে ধরা পড়ল বড় বোন
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় প্রচণ্ড রোদের মধ্যে তিন বছরের এক শিশুর চোখে, মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে রক্তমাখা শরীর নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বসল বড় বোন।
অবুঝ ছোট বোনকে অন্ধ বানানোর নাটক সাজিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে ভিক্ষা করছে বড় বোন। অন্ধ ভেবে ওই শিশুকে ৫০০ টাকা ভিক্ষা দিতে গিয়ে থমকে গেলেন পুলিশের এক এসআই। আবিষ্কার করলেন ভিন্ন এক ঘটনার।
শিশুটির চোখ, মাথা ও হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে রাখা হলেও আসলে সে অসুস্থ নয়। রক্তমাখা শরীর নিয়ে নাটক সাজিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বসল দুই বোন। মানুষের চোখে ধোঁকা দিয়ে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার এ ঘটনা প্রকাশ্যে ফাঁস করলেন সোনারগাঁ থানা পুলিশের এসআই আবুল কালাম আজাদ। অন্ধ শিশুটিকে ৫০০ টাকা ভিক্ষা দিতে গিয়ে প্রতারণার রহস্য উদঘাটন করেন তিনি। খুব কৌশলে এই প্রতারক চক্রকে ধরতে সক্ষম হন এসআই।
মঙ্গলবার দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তার ফুটওভার ব্রিজের ওপর থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে দুই বোনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তার ফুটওভার ব্রিজের ওপর তিন বছরের এক শিশুর চোখ, মাথা ও হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে রক্তমাখা শরীর নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। পাশে এক মেয়ে বোরখা পরে শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে সবার কাছে ভিক্ষা চাইছে। মেয়েটি কান্না করে বলছে, আমরা অসহায়, আমাদের কেউ নেই, আমার ছোট বোনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, হাত ভেঙে গেছে, তার চিকিৎসা করানোর জন্য আপনারা কিছু টাকা সাহায্য দিলে আমার বোনটি চোখে দেখতে পাবে, তার হাতটি ভালো করা সম্ভব হবে।
মেয়েটির কান্না দেখে পুলিশের এসআই আজাদের হৃদয় গলে যায়। তিনি শিশুটির চোখ ও হাতে ব্যান্ডেজ এবং শরীর রক্তাক্ত দেখে সহযোগিতা করতে চান।
তখন পুলিশের এসআই আজাদ পকেট থেকে টাকা বের করেন শিশুটিকে দেয়ার জন্য। এ সময় শিশুটির চোখ ও হাতে ব্যান্ডেজ দেখে তার মনে সন্দেহ জাগে। তিনি ভাবতে থাকেন শিশুটির হাত যদি ভাঙা হয় তাহলে তার হাত ধরলে একটু হলেও ব্যথা পাবে। ঠিক তখন শিশুটির হাতের ব্যান্ডেজে চাপ দেন এসআই। কিন্তু এতে শিশুটি ব্যথা পায়নি, কোনো চিৎকারও করেনি।
তখন এসআই আজাদ বুঝতে পারেন এটি সাজানো নাটক ও প্রতারণা। পরে শত শত লোকের সামনে শিশু ও মেয়েটিকে ফুটওভার ব্রিজ থেকে নিচে নামিয়ে আনেন। শিশুটি চোখে দেখে না, হাত ভেঙে গেছে কিনা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলে। সেই সঙ্গে এ ঘটনা নাটক জানিয়ে ক্ষমা চায় বড় বোন।
পরে শিশুটির চোখের ব্যান্ডেজ, হাতের ব্যান্ডেজ খুললে দেখা যায় বিষয়টি সাজানো নাটক। অবুঝ শিশুকে অন্ধ বানিয়ে চোখে ও হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে চিকিৎসা করানোর নামে ভিক্ষা করছে তারা। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে এভাবে বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করেছে তারা।
প্রতারণা করে ভিক্ষা করা দুই বোন হলো- রায়েরবাগের সি-ব্লকের আবুল ডাক্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া সালাউদ্দিনের মেয়ে তাসলিমা আক্তার (১৫) ও ছোট মেয়ে শিশু সালেহা (৩)। তবে কার কথায় এমন নাটক সাজিয়ে ভিক্ষার জন্য রাস্তায় নেমেছে পুলিশের কাছে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি তারা।
সোনারগাঁ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটি অবুঝ শিশুর চোখে, মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে রক্তমাখা শরীর নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বসল বড় বোন। দেখে মনে হয় শিশুটি অন্ধ ও হাত ভাঙা। ছোট বোনের চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা করছে এমন দৃশ্য দেখে পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে সাহায্য করতে যাই। কিন্তু একটু সন্দেহ হলে প্রতারণার রহস্য উদঘাটন হয়। কেন তিন বছরের অবুঝ শিশুকে ব্যবহার করে ভিক্ষা করানো হচ্ছে পুরো ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে যদি মানুষ প্রতারণা করে ভিক্ষা করে তাহলে তো প্রকৃত অসহায় মানুষ সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি আসলেই গুরুতর।
মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/এমএস