চকবাজারে তৈরি, ঈদের বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ড বলে বিক্রি
ঈদের বাজারে বিদেশি পণ্যের ছড়াছড়ি। এসব পণ্যের গায়ে নেই কোনো মূল্য তালিকা। যার যেমন ইচ্ছা তেমন করে পণ্যের মূল্য বসাচ্ছেন দোকানিরা। যার কাছে যেমন পারছে তেমন দাম নেয়া হচ্ছে। আবার দেশি অনেক পণ্যের গায়ে বিদেশি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করা হয়।
একই পারফিউম এক দোকানে ২৬০ টাকা আবার অন্য দোকানে ৫০০ টাকা। মেয়েদের বিভিন্ন প্রসাধনী বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের বলে বিক্রি করলেও নেই কোনো কাগজপত্র। যার অধিকাংশ ঢাকার চকবাজার তৈরি। এসব পণ্যের গায়ে বিদেশি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়, সেই সঙ্গে বিদেশি মূল্য তালিকা অনুসারে বিক্রি করা হয়।
এদিকে, কাপড়ের বাজারের অবস্থাও একই। মার্কেটের অধিকাংশ দোকানে দেশি কাপড় বিদেশি বলে বিক্রি করা হয়। সেই সঙ্গে একেক দোকানে একই কাপড়ের দাম একেক রকম। বিদেশি বলে বিক্রি করা এসব দেশি কাপড়ের মূল্য লাগামহীন।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন দোকানপাট ও মার্কেটে অভিযান চালিয়ে এসব অনিয়মের প্রমাণ পায় জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার কোর্ট রোডে অবস্থিত সুপার ড্রাগসে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি প্রসাধনী বিক্রি করে আসলেও তাদের সঠিক কোনো কাগজপত্র নেই, দেশি পণ্য বিদেশি বলে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সুপার ড্রাগসকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পাশাপাশি মৌলভীবাজার ট্র্যাডিশন শপ বিদেশি পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে আসছে। পাশের দোকানে যে পারফিউমের দাম ২৫০ টাকা ট্র্যাডিশন শপে সে পারফিউমের দাম ৫০০ টাকা। ঢাকার চকবাজারে তৈরি এসব পারফিউম বিদেশি ব্র্যান্ড বলে বিক্রি করার কারণে একেক দোকানে একেক রকম দাম রাখা হয়। বিদেশি বলে যে হ্যান্ডব্যাগ ৮ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করা হয় সেটির কোনো কাগজপত্র নেই।
অথচ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, বিদেশ থেকে যে পণ্য আনবে সে মূল্য বসাতে পারবে তৃতীয়পক্ষ মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে না। কিন্তু ট্র্যাডিশন কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বসিয়ে দেয়। এসব অনিয়মের কারণে সব পণ্যের মেমো-ভাউচারসহ তাদেরকে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৩০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
পাশের মার্কেটে ঈশিতা কাপড়ের দোকানে বিদেশি ব্র্যান্ড বলে একটি টি-শার্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু ক্রয় মূল্যের কোনো মেমো দেখাতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির মালিক। এজন্য ঈশিতা কাপড়ের দোকানকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
একই অবস্থা চলছে কসমেটিকসের বাজারেও। বিদেশি বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হচ্ছে দেশে তৈরি নিম্নমানের কসমেটিকস। যার প্রমাণ হাতেনাতে পেয়েছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় এক প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
শুধু তাই নয়, স্বর্ণের দোকানেও নেই কোনো মূল্য তালিকা। যার কারণে একটি স্বর্ণের দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানে সর্বমোট ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলামিন জাগো নিউজকে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নিয়মিত এ অভিযান চালাবে। দেশি পণ্য বিদেশি বলে বাজারে বিক্রি এবং ইচ্ছামতো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করার প্রমাণ পেয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান দেশি পণ্য বিদেশি বলে বিক্রি করছে, তাদেরকে জরিমানা করার পাশাপাশি সব পণ্যের মেমো-ভাউচার নিয়ে এখানে আসতে বলা হয়েছে।
রিপন দে/এএম/পিআর