ঝড়-বৃষ্টি হলেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় খুশিমনকে
জন্মের পর চেহারায় হাসিখুশি ভাব ছিল বলে বাবা ও মা নাম রেখেছিলেন খুশিমন। কিন্তু সংসার জীবন শুরু হওয়ার পর থেকেই খুশিমনের চেহারা থেকে ধীরে ধীরে আলো চলে যেতে থাকে। স্বজন হারিয়ে জীবন সায়াহ্নে এখন একা হয়ে পড়েছেন শতবর্ষী এই হতদরিদ্র নারী। বর্তমানে ছাউনিবিহীন একটি মাটির ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
খুশিমন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নিজমাওনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানান, তার বয়স এখন প্রায় শতকের কাছাকাছি। বিয়ে হয়েছিল একই গ্রামের দিনমজুর বুজরত আলীর সঙ্গে। ২০১০ সালে বয়সের ভারে মারা যান স্বামী বুজরত আলী। শেষ বয়সে একমাত্র যে ছেলের কাছে আশ্রয় নেয়ার কথা ছিল ২০০৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সেই ছেলেকেও হারান তিনি। এরপর থেকেই একা হয়ে পড়েন খুশিমন। গত কয়েক মাস আগে কালবৈশাখী ঝড়ে নিজের যে থাকার ঘরটি ছিল সে ঘরের ছাউনিটিও উড়ে যায়। এরপর থেকেই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে এ বাড়ি ও বাড়িতে সময় কাটাতে হয় তাকে।
খুশিমন আরও জানান, তিনি সহায়সম্বল হারিয়েছেন অনেক আগেই। পরে তাকে একা করে স্বামী ও সন্তানও চলে গেছেন। এরপর থেকে এই একটি মাটির ঘর ছিল তার শেষ আশ্রয়স্থল। তিনি হতদরিদ্র বিধায় ঘরের দরজা জানালা লাগাতে পারেননি, তবে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরে ছাউনি দিয়েছিলেন সেটাও ঝড়ে উড়ে গেছে। এখন ছাউনি ছাড়াই ঘরে দিনযাপন করতে হচ্ছে তাকে। তবে সমস্যায় পড়েন যখন ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয় তখন আশ্রয় নিতে হয় প্রতিবেশীদের বাড়িতে। এছাড়াও বয়সের ভারে নুব্জ হয়ে পড়ায় এখন আর তিনি কাজ করতে পারেন না। পাড়া প্রতিবেশীদের সহায়তায় চলছে তার ক্ষুধা নিবারণের চাহিদা।
তিনি জানান, তার ঘরের ছাউনি উড়ে যাওয়ার পর তিনি সহায়তার জন্য সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সবাই তাকে সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন কিন্তু এগিয়ে আসছেন না। সামনে বর্ষাকাল, ঘরের ছাউনির ব্যবস্থা না হলে তার পুরো মাটির ঘরটিই ধসে পড়বে।
এ বিষয়ে গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য জাকির হোসেন জানান, তার ওয়ার্ডটি অনেক বড় এখানে অনেক সুবিধাবঞ্চিত লোকজনের বসবাস। এই অসহায় নারীকে ইতিমধ্যেই সরকারি সহায়তার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। তবে ঘরের ছাউনিটি মেরামতের জন্য তেমন কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। তবে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
শিহাব খান/আরএআর/এমকেএইচ