ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করতেই দ্রুত চলে গেলেন প্রকৌশলী

জেলা প্রতিনিধি | নেত্রকোনা | প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, ২৬ মে ২০১৯

কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। কাজের সময়সীমা দেড় বছর। কিন্তু নির্মাণাধীন সেতুটির দুই পাশে পাইল ও ভিত্তি তৈরি করতেই কেটে গেছে দেড় বছর। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়েছে বছর খানেক আগে। কিন্তু সেতু নির্মাণের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

স্থানীয়রা বলছেন, ঠিকাদারের গাফিলতি এবং সেতুর তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হয়েছে। এ চিত্র নেত্রকোনা-সিধলী সড়কের রাজাপুর সেতু প্রকল্পের। আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে।

নেত্রকোনা এলজিইডি কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৫ মে রাজাপুর সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বায়ন করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৫ দশমিক ২৫ মিটার। ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজ পায় মেসার্স রিজভী কনস্ট্রাকশন নামে ময়মনসিংহের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সেতুর কাজ শুরু করে ২০১৮ সালের ১৬ জুন তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে শুধু সেতুর বিকল্প পথ (ডায়াবেশন) তৈরি করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয় মূল সেতুর কাজ। কিন্তু সেতুর দুই পাশে পাইল ও ভিত্তি তৈরি করতেই কেটে গেছে পুরো বছর। দেড় বছর মেয়াদের এই সেতুটি এখনো ৩০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।

Picture-Netrokona

তবে এলজিইডি বলছে, সেতুতে শুধু ঢালাই কাজ ও দুই পাশের সংযোগ সড়ক বাকি আছে। সব মিলিয়ে আগামী দুই- তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই পথ দিয়ে চলাচলকারীদের শঙ্কা যেভাবে কাজ হচ্ছে তা শেষ হতে চলতি বছরও চলে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে গত মার্চ মাসে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় স্থানীয় এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান সংশ্লিষ্টদের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে, বৃষ্টির পানি বেড়ে যাওয়ায় গত তিন সপ্তাহ ধরে পথচারীদের বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। কারণ ওই বিকল্প পথটির স্থানে স্থানে পানি জমে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে।

এতে করে যানবাহন নিয়ে চলাচলকারী ও পথচারীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ব্যস্ত ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ চলাচল করেন।

এছাড়া স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করে শতাধিক শিক্ষার্থী। নেত্রকোনা থেকে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আওতায় প্রধান সংযোগ সড়ক দুটি গত তিন বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় লোকজনদের বাধ্য হয়ে নেত্রকোনা-কলমাকান্দার সিধলী সড়ক দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।

Picture-Netrokona

গত বুধবার দুপুর সরেজমিনে দেখা যায়, হাতেগোনা ৮-১০ জন শ্রমিক সেতুর উত্তর পাশে রড বাঁধাইয়ের কাজ করছেন। তাদের মধ্যে একজন জানান, এভাবে কাজ করে সেতু সমাপ্ত করতে আরও ৫-৬ মাসের প্রয়োজন হবে।

কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নের নক্তিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নজরুরুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত জেলা শহরের আসতে হয় ওই সড়ক দিয়ে। রাজাপুর সেতুটি নির্মাণে দীর্ঘসময় লাগায় দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ রীতিমতো অতিষ্ঠ। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণেই এমনটি হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে এমন হতো না।

সেতুর সংযোগ সড়কে পানি জমে গর্তে আটকে পড়া সিএনজি চালক বাবুল মিয়া বলেন, প্রতিদিনই এই পথ দিয়ে সিএনজি চালাই। কিন্তু রাজাপুর সেতু এলাকায় এলেই আতঙ্কে থাকি কখন গাড়ি নিয়ে গর্তে আটকে পড়ি। মানুষজন ছোট নৌকায় ও দূর দিয়ে হেঁটে স্থানটি পার হয়। সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান তিনি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশনের মালিক হোসাইন আহম্মেদ ওরফে পান্না বলেন, সড়কে বালু ফেলে সচল রাখছি। আর এখন দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে। শেষ না হওয়ায় আমিও সেতুটি নিয়ে সমস্যায় আছি। জুনের ১৭ তারিখ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। হয়তো এর মধ্যে শেষ হবে।

এলজিইডির সদর উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. আরিফুল্লাহ খানের দফতরে গিয়ে জানতে চাইলে বলেন, সেতুর কাজ ঠিক মতোই চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। এখন ঢালাই ও সংযোগ সড়কের কাজ বাকি আছে। এত সময় লাগার কারণ ও কাজের মান জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কক্ষ থেকে চলে যান।

সেতু নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সেতুর ডিজাইন করার সময় বিকল্প সড়ক ছিল না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়ক্ষেপণ করায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। আমি এখানে যোগদান করার পর প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত কাজ শেষ করতে নোটিশ দিয়েছি। এখন কাজের গতি এগোচ্ছে। ওই সেতুটি সদর উপজেলা এলজিডির কার্যালয় দেখভাল করছে।

কামাল হোসাইন/এএম/জেআইএম

আরও পড়ুন