কারাগারে যেন রাত না আসাই মঙ্গল
কক্সবাজার জেলা কারাগারে ধারণক্ষমতা ৫৩০ জনের। কলাতলী বাইপাসে পাহাড়ঘেরা ১২ একর আয়তনের কারাগারটিতে ৪৯৬ পুরুষ এবং ৩৪ জন নারী বন্দি থাকার কথা। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে এ কারাগারে গড়ে বন্দি থাকছেন ৪ হাজারের বেশি। এতে একজনের জায়গায় রাত্রী যাপন করছেন ৮ জন বন্দি।
এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তাই জামিনযোগ্য মামলাগুলোতে জামিন কিংবা নিষ্পত্তিমূলক মামলা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. বজলুর রশিদ আখন্দ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ২০০১ সালে উদ্বোধন হওয়া ১২ দশমিক ৮৬ একর আয়তনের কারাগারের অভ্যন্তরের পরিমাণ ৮ দশমিক ০৯ একর আর বাইরের পরিমাণ ৪ দশমিক ৭৭ একর। এটির ধারণক্ষমতা ৫৩০ জন। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে কারাগারে গড়ে বন্দি থাকছে ৪ হাজারের অধিক। প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বন্দি। রয়েছে ভারতীয় ৪ নারী-পুরুষসহ মিয়ানমারে ২৪৩ জন নাগরিক। এদের মাঝে ৫ জনের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
কারা তত্ত্বাবধায়ক আরো বলেন, বন্দিরাও মানুষ। এভাবে একজনের জায়গায় প্রায় আটজন অবস্থান করা কষ্টসাধ্য। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয় রাত না আসাই তাদের জন্য মঙ্গলময়। বন্দিদের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে জামিনযোগ্য মামলাগুলো দ্রুত জামিন দিতে জেলা বিচার বিভাগকে প্রায়ই অনুরোধ করা হয়। তারাও যথাসম্ভব জামিন দিচ্ছে কিন্তু যতজন বের হয় তার চেয়ে ঢের বেশি নতুন বন্দি যোগ হয় কারাগারে। তাই আমরাও বিপাকে রয়েছি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে কারান্তরীণ বন্দিদের মাঝে শতকরা ৭৫ জন মাদক মামলার আসামি। ৫ পিস থেকে ২০০ পিস নিয়ে আটক হওয়া মাদক ব্যবসায়ীদেরও জামিনের আগে কম করে হলেও ২-৩ মাস কারান্তরীণ রাখা হয়। আর চলতি সময়ে জেলা প্রশাসন থেকেও ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে নানা অপরাধে নানা জনকে এক মাস থেকে এক বছরও সাজা দিয়ে কারান্তরীণ করা হচ্ছে। এসব মামলায় আপিল ও জামিনের ব্যবস্থা ধীর গতিতে হয়। ফলে জামিনের সম্ভাবনা থাকা মামলায়ও অনেকে মাসের পর মাস কারাগারে থাকছেন।
সূত্র আরো জানায়, শুধু এসব মামলা নয়, মারামারি, জমি দখল বা অন্য অপরাধে কারাগারে থাকা আসামিরাও জামিন পান কম। কারণ তারা জামিনের জন্য আদালতে প্রসেস করলেও প্রতিপক্ষ সেখানে শক্ত বিরোধিতা করেন। ফলে বিচারক সহজে তাকে আর জামিন দিতে পারেন না। এভাবে কারাগারে বন্দির সংখ্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউল করিম রেজা বলেন, এক জনের জায়গায় আট জনের অবস্থান করা চরম অমানবিক। কিন্তু ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি এলে কারা কর্তৃপক্ষের করার কিছুই থাকে না। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী জেলার কারাগারগুলোতে কিছু বন্দি স্থানান্তর করা গেলে হয়ত এ সমস্যা থেকে কিছুটা উত্তরণ করা যেত।
জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ বলেন, বিগত একযুগের সমীকরণ দেখে জেনেছি কারাগারটি শুরুর পর থেকে ২ হাজার পাঁচশ জনের নিচে কখনো আসেনি। এটি দিন দিন বাড়তে থাকায় কারাভ্যন্তরে নতুন ৬তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। ১২ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনে ২০০ জনের ধারণ ক্ষমতা থাকছে। প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ শেষ হলে বন্দিরা একটু স্বস্তি পেতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এফএ/এমএস