কয়রায় আজও নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ
আজ ভয়াল সেই ২৫ মে। ২০০৯ সালের এই দিনে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই থেকে দিনটিকে এ জনপদের মানুষ বিভীষিকাময় দিন হিসেবে স্মরণ করে আসছে। এই দিনে কয়রার পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেলে তাৎক্ষণিক গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে প্রাণহানি হয় ৫৭ জনের।
আইলার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় লাখ লাখ মানুষ তাদের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সহায়-সম্বলহীন স্বজনহারা লোকজন আজও এই দিনটি আতঙ্কের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে।
উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম মিজান মাহমুদ বলেন, এখনও লবণাক্ততার গ্রাস থেকে পূর্ণাঙ্গ রক্ষা পায়নি সমগ্র কয়রা এলাকা। লবণাক্ত জমিতে লবণ সহনশীল ফসল উৎপাদন করতে পারছে স্থানীয় কৃষকরা। আইলার তিন বছর পর ভেঙে যাওয়া ভয়াবহ পবনা বাঁধ, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, শিকারিবাড়ি, পাথরখালি মেরামত করা হয়। তবে কয়রার ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত মাটি নেই। পাউবো কর্তৃপক্ষ মাটি না দেয়ায় বাঁধগুলোর সব জায়গায় দুর্বল অবস্থা বিরাজ করছে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইলার পর থেকে এ অঞ্চলে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে খাবার পানির জন্য প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ অদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, আইলার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে কয়রাকে পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকুলীয় এলাকা ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকার বেড়িবাঁধগুলো অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে আবারো গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আইলার ক্ষতি এখনও কেটে ওঠা সম্ভব হয়নি। কয়রাও সবচেয়ে বড় সমস্যা বেড়িবাঁধ। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে আতঙ্ক কাটবে না এ জনপদের মানুষের।
পাউবোর আমাদী উপ-বিভাগীয় শাখা কর্মকর্তা মো. মশিউল আবেদিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটির কাজ চলছে। তা ছাড়া ভাঙনকবলিত অনেক এলাকায় টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি যে সকল বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এলাকার মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার বড় সমস্যা বেড়িবাঁধ সংস্কার, সে ব্যাপারে কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।
আলমগীর হান্নান/আরএআর/জেআইএম