শ্রমিক ইউনিয়নে বহিরাগত সভাপতি, অর্থ লুটপাট
খুলনার রূপসা-বাগেরহাট আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বহিরাগত সভাপতিকে বিতাড়িত করে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মিশন ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত এডহক কমিটি বিলুপ্ত করে আরেক বহিরাগত সভাপতির চেয়ারে বসেছেন। সাধারণ শ্রমিকরা এখন তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সুবিধা-অসুবিধা বা বিপদে-আপদে শ্রমিক সংগঠনে ঠাঁই মিলছে না ইউনিয়নের সাধারণ শ্রমিকদের। এমনকি এ ইউনিয়নে প্রতিমাসের চাঁদা আদায়ের আড়াই লাখ টাকা নিমেশে উধাও হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় এমপির এক সময়ের ফুটবল খেলার পার্টনার পরিচয়ধারী উপজেলার জাবুসা গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আহমেদ রাজু এসব কাজে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
সাধারণ শ্রমিকদের অভিযোগ, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রয়াত মফিজুল ইসলাম মফিকে বিতাড়িত করে চেয়ার দখল করেন খুলনা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বিএম জাফর। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে শ্রমিক সংগঠনের অর্জিত সমূদয় টাকা আত্মসাৎ করায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাকে সংগঠন থেকে বিতাড়িত করে সাধারণ শ্রমিকরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এডহক কমিটি গঠন করেন। যা জেডিএল দ্বারা অনুমোদিতও হয়। শ্রমিক সংগঠনের আইন মোতাবেক ৪৫ দিনের মধ্যে এডহক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে না পারলে ফের নতুন এডহক কমিটি গঠিত হবে।
এদিকে রূপসা-বাগেরহাট আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এডহক কমিটি গঠনের পর ইউনিয়নের সভাপতি কর্তৃক বিগত ৫ বছরের আত্মসাৎ করা ১ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা আদায়ের লক্ষ্যে সাধারণ শ্রমিকরা আন্দোলন সংগ্রাম করে। পরিস্থিতি শান্ত করতে স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এম এম মুজিবর রহমান ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইউনিয়ন অফিসে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তিনি সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইউনিয়নের অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন- শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেবে প্রকৃত শ্রমিকরা। বহিরাগত অশ্রমিকদের কোনো জায়গা এখানে হবে না।
অথচ এডহক কমিটি বিলুপ্ত করে কোনো প্রকার নির্বাচন ছাড়াই অশ্রমিকদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন জাবুসা গ্রামের হায়দার আহমেদ রাজু, যিনি শ্রমিক নন। তিনি সভাপতির চেয়ারে বসেই কখনো নিজেকে স্থানীয় এমপির বন্ধু, আবার কখনো তার ফুটবল খেলার পার্টনার হিসেবে দম্ভ প্রকাশ করে চলেছেন। সাধারণ শ্রমিকরা সুবিধা-অসুবিধায় পড়ে ইউনিয়ন অফিসের দ্বারস্থ হতে পরছে না। নিজের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন ইউনিয়ন অফিসটিকে।
এদিকে অবৈধভাবে গঠিত কমিটি দ্বারা ইউনিয়ন পরিচালিত হলেও শ্রম অধিদফতর (জেডিএল) থেকে চিঠি-পত্র আসছে এডহক কমিটির কাছে। এমনকি এখনো নির্বাচন করার জন্য তাগিতও দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এম মুজিবর রহমান বলেন, হায়দার আহমেদ রাজুকে ইউনিয়নের সভাপতি করা হয়নি। এমনকি ওই ইউনিয়নের কোনো কমিটিও গঠিত হয়নি। রাজুকে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করাসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত করা হয়েছে। এখন যদি সে নিজেকে সভাপতি পরিচয় দেয় বা নিজে সভাপতি সেজে কোনো কমিটি করে ইউনিয়ন পরিচালনা করে তাহলে তা সঠিক কাজ হবে না।
তিনি বলেন, ঈদের পর সকল শ্রমিকদের সমন্বয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে এ ইউনিয়নের কমিটি গঠন করা হবে। এখানে কোনো অশ্রমিক বা অপেশাজীবী থাকতে পারবে না।
এ ব্যাপারে শ্রম অধিদফতর খুলনার পরিচালক মো মিজানুর রহমান বলেন, এডহক কমিটিকে বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তাছাড়া পেশাজীবী ট্রেড ইউনিয়নে কোনো পদে বা সদস্য হিসেবে অশ্রমিকরা আসতে পারবে না। এ ধরণের অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে
আলমগীর হান্নান/আরএআর/এমকেএইচ