ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

তিন হাজার লোকের দখলে কুষ্টিয়ার নদ-নদী-খাল

জেলা প্রতিনিধি | কুষ্টিয়া | প্রকাশিত: ০১:২৬ পিএম, ২০ মে ২০১৯

কুষ্টিয়ার নদ-নদী ও খালের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত তিন হাজার দখলদার রয়েছে। ফলে নদ-নদী ও খালের প্রবাহ স্বাভাবিক নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন পৃথকভাবে এসব দখলদারদের চিহ্নিত করেছে। গত এপ্রিল মাসে জেলার ছয়টি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া কার্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করে এ তালিকা তৈরি করেছে।

ভূমি কার্যালয় ও পাউবোর করা দখলদারদের তালিকাগুলো জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হয়েছে। গত শনিবার কুষ্টিয়া শহরের জিকে ঘাট এলাকায় গড়াই নদীর ধারে উচ্ছেদ অভিযানও শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন,নদ-নদী ও খাল বেদখল রয়েছে। তার তালিকা আমাদের কাছে আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে যৌথ বৈঠক করে অভিযানে নামা হয়েছে। যেকোনো উপায়ে নদ-নদী ও খালের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মার্চ মাসে প্রত্যেক উপজেলা সহকারী কমিশনারের ( ভূমি) কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে দখলদারদের তালিকা চাওয়া হয়। তবে কেউই তেমন সাড়া দেয়নি। পরে কঠোর ভাষায় চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, তালিকা না পাঠালে পরবর্তিতে যদি দখলদার পাওয়া যায় তবে তার দায় তাকেই (কমিশনার) নিতে হবে। এরপর ছয়টি উপজেলা থেকে দখলদার তালিকা আসতে থাকে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওবাইদুল হক বলেন, ছয়টি উপজেলার মধ্যে প্রথমে দুটি উপজেলার তালিকা পাওয়া যায়। সেটা খুবই সামান্য। সন্তুষ্ট না হয়ে আবার তাগিদ দেয়া হয়। তালিকার বাইরে আরও অনেক দখলদার রয়েছে। পরবর্তীতে এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ছয়টি উপজেলা ও পাউবোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা হাতে পাই।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া দখলদারদের তালিকায় রয়েছে পদ্মা নদী, গড়াই নদী ও কয়েকটি বিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় এসব নদ-নদীর বাইরেও বেশি দখল করে আছে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের ছোট বড় খালগুলো। জেলার ছয় উপজেলার ভূমি কর্মকর্তাদের পাঠানো তালিকায় প্রায় ৪০০ জন দখলদারের নাম উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি দখলদার রয়েছে ভেড়ামারায় অন্তত ২০০ জন। সেখানে হিসনা নদী দখল করে পাকা দালানও করা হয়েছে। বাকি ২০০ জন পাঁচ উপজেলার দখলদার।

kushtia-river01

সরেজমিনে হিসনা নদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর উভয় পাড়ে বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর বুকে পানি না থাকায় কোনো কোনো জায়গায় ধান চাষ করা হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটা একটা নদী।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় হিসনা নদীতে বড় বড় ট্রলার চলেছে। নদীর বর্তমান অবস্থা দেখে সেই কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ বলেন, ভেড়ামারাতে হিসনা নদীতে অন্তত ২ শতাধিক দখলদারের নামের তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর সংখ্যা আরও বেশি হবে। বিভিন্ন সময়ে দখল হয়ে গেছে নদীটি। নদীতে পানি প্রবাহ কম। কোনো কোনো জায়গায় বাঁধও দেয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী- পদ্মা নদী, গড়াই নদী ও সেচ প্রকল্পের ছোট বড় খাল দখল করে আছে অন্তত ২ হাজার ৯২১ জন দখলদার। বেশির ভাগই পাকা ও আধাপাকা টিনের বসতঘর। কোনো কোনো জায়গায় টিনের দোকান রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে বাস ও ব্যবসা করে আসছে তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, জেলার বেশ কয়েকটি খাল সংকুচিত হয়ে গেছে। সেগুলো খনন কাজ শুরু হয়েছে। খালের জায়গা যারা দখল করে আছে তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। খাল খননের সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।

কুষ্টিয়া শহরের বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিক কমিটি কুষ্টিয়া শাখার সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, আমি প্রায়ই সকালে গড়াই ও পদ্মা নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে বের হই। কিন্তু নদীর দিকে তাকালে দখল ও দূষণ দেখে কষ্ট লাগে। দখলদারদের তালিকা যখন করা হয়েছে, তাহলে তাদের চিহ্নিত করা গেছে। এখন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

আল-মামুন সাগর/আরএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন