মাগুরায় সিন্ডিকেটে ‘জিম্মি’ কৃষকরা
চলতি মৌসুমে মাগুরার শালিখা উপজেলায় ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ এ অঞ্চলের কৃষকরা। সরকার দেশব্যাপী ধান সংগ্রহ শুরু করলেও ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে সস্তায় ধান বেচতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ কৃষকদের।
দেশব্যাপী সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলেও এ উপজেলায় এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি এখনও। একাধিক কৃষক জানান, বোরো ধান ক্ষেত থেকে ওঠার পরপর সরকার ধান সংগ্রহ শুরু না করায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলে ঠকছেন এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা।
চলতি বছরের ২ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান চলছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল জেলা উপজেলাতে ধান ও চাল সংগ্রহ করা হলেও শালিখা উপজেলাতে এখনো ধান ও চাল সংগ্রহের উদ্বোধন হয়নি।
শালিখা কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ বছর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৩ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন ও ধান ৮০ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে মোট আবাদী জমি পরিমাণ রয়েছে ১৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন শতভাগ পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ হিসাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য হয় ১০৪০ টাকা, চালের মূল্য ১৪৪০ টাকা। ধান ক্রয়ের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এ উপজেলায় ১৫শ ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও ৪২২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মিনা খানম।
তবে আড়পাড়া গ্রামের কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এক মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর বর্তমানে বাজারে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলে প্রতি মণে ১ হাজার ৪০ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু সেটা শুরু না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করেছেন তিনি।
ধান ব্যবসায়ী মো. আলম মুন্সী, ইকবল হোসেন ও রিপন বিশ্বাসসহ আরও অনেকে জানান, গত হাটেও ধানের দাম কম ছিল, মাঝে মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেলেও গতকাল রোববারের হাটে তা আবার আগের দামেই ফিরে গেছে। সরকার ধান সংগ্রহ শুরু করলে তবেই দাম বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
প্রতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের তালিকা সংগ্রহ করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু চলতি বছর ধান সংগ্রহের নির্দেশনা থাকলেও সংগ্রহ অভিযান চালাতে বিলম্ব হওয়ায় ধান ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেট কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মিল মালিক অবশ্য এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাইরে থেকে এলাকায় ধান ঢুকছে বলে ধানের মূল্য কম। তবে এখানে মিল মালিকদের কোনো সিন্ডিকেট ব্যবসা নেই।
শালিখা উপজেলার আড়পাড়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এল এসডি মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এখনও ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে পারিনি। তবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি।
আরাফাত হোসেন/এফএ/জেআইএম