সেই প্রাইভেটকার থেকে বেরিয়ে এলো ১২ কেজি সোনা
যশোরে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা সেই প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার করা হলো ১১০টি সোনার বার। শুক্রবার রাতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রাইভেট কারটি তল্লাশি করে গিয়ার বক্সের মধ্য থেকে এই সোনার বার উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ওই কার ছিনতাই চেষ্টাকালে আটকের পর পালিয়ে যায় এক পুলিশ কনস্টেবল। এ ঘটনায় বাঘারপাড়া থানা পুলিশের ওসিসহ ৩ জন ক্লোজড হন। কারটি আটকের দু’দিন পর এই সোনার বার উদ্ধার নিয়ে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ছিনতাই চক্রের ওই পুলিশ সদস্যরা এই সোনার বারের জন্যই মিশনে নেমেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাঘারপাড়া থানা পুলিশেরে ওসি ছয়রুদ্দিন আহমেদ জানান, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক স্যারের উপস্থিতিতে শুক্রবার রাতে প্রাইভেটকারটিতে (ঢাকামেট্টো-গ-১৩-৯৫৪০) তল্লাশি করা হয়। এসময় গাড়ির গিয়ার বক্সের ভেতরে বিশেষ কায়দায় সোনার বারগুলো ১১টি প্যাকেটে লুকিয়ে রাখা ছিল। সেখান থেকে মোট ১১০টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এর ওজন ১২ কেজি ৮৩ গ্রাম।
সূত্র জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে খুলনা নগরীর দুই নম্বর কাস্টমস ঘাটের মৃত রেজোয়ান খানের ছেলে তৌহিদুর রহমান খান (৪৬) নড়াইলের কালনাঘাট এলাকা থেকে একটি প্রাইভেটকারযোগে খুলনার দিকে যাচ্ছিলেন। নড়াইল-যশোর সড়কের গাবতলা ব্রিজের কাছে পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলে ৫/৬ জন তাদের গতিরোধ করে। এ সময় তারা নিজেদের ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে ওই প্রাইভেটকারের চালক মালেকের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেন। ‘গাড়িতে অবৈধ সোনা রয়েছে এবং থানায় নিয়ে গাড়ি তল্লাশি করা হবে’ বলে মিজান গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন। পিস্তল দেখিয়ে সবাইকে চুপ করে বসে থাকতে বলে মিজান নিজেই গাড়িটি চালিয়ে নিকটস্থ একটি ইটভাটায় নিয়ে যান। সেখানে গাড়ির চালক ও আরোহীকে বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় তাদের কাছে থাকা নগদ চার হাজার ৭০০ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এরপর আবার গাড়ি চালিয়ে তারা বসুন্দিয়ার দিকে যেতে থাকে। পথে ধলগ্রাম রাস্তার মোড়ে ভিটাবল্লা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তরুণ কুমার কর গাড়িটি চ্যালেঞ্জ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে মোটরসাইকেলে গাড়িটি অনুসরণ করা সহযোগীরা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ মিজানুর রহমানকে আটক করে। আটক মিজান নড়াইলের নড়াগাতি থানার নয়নপুর গ্রামের মৃত মোক্তার শেখের ছেলে। জিজ্ঞাসাবাদে মিজান পুলিশকে জানান, তিনি ঝিকরগাছা থানার কনস্টেবল। এই ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় তিনিসহ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ওয়াচার সাতক্ষীরায় কর্মরত লিপ্টন, পাবনার সুজানগর থানার কনস্টেবল রুবায়েত হোসেন এবং অভয়নগরের মোশাররফ ও আশরাফ নামে আরও দুই জন ছিল বলে স্বীকার করেন মিজান।
ওই ঘটনায় তৌহিদুর রহমান খান বাদী হয়ে সেই রাতে বাঘারপাড়া থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ মিজানকে এ মামলায় আটক করে থানায় রাখে। কিন্তু পরদিন ভোরে কনস্টেবল মিজান থানা থেকে পালিয়ে যান।
আসামি পালানোর এ খবর পেয়ে ৩ সেপ্টেম্বর সকালে বাঘারপাড়া থানায় যান যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক ও সহকারী পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন। দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাঘারপাড়া থানা পুলিশের ওসি কাইয়ুম আলী সরদার, এএসআই নাসির ও কনস্টেবল ওলিয়ার রহমানকে সেদিন বিকেলে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
চাঞ্চল্যকর ওই ছিনতাই চেষ্টার দু’দিন পর পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে উদ্ধার প্রাইভেট কারের মধ্যে সোনার বার রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গাড়িটি তল্লাশি করে গিয়ার বক্সের মধ্যে থেকে এই বার উদ্ধার করা হয়।
সোনার বার উদ্ধারের পর গোটা ঘটনা এখন নতুন মোড় নিয়েছে। ওই প্রাইভেট কারের মালিক ও ছিনতাই চেষ্টা মামলার বাদী খুলনার তৌহিদুর রহমানকে এখন পুলিশ খুঁজছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সোনা চোরাচালানকারী চক্রের সদস্য। আর এই সোনার বারের খবর পেয়েই পুলিশের ওই চক্রটি ডিবি পরিচয় দিয়ে তা লুট করে নেয়ার চেষ্টা করছিল।
মিলন/এমএএস/পিআর