হোস্টেলের সামনে মেডিকেল ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরল যুবক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) মেয়েদের হোস্টেলের সামনে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে ও ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে কলেজের একাডেমিক ভবনের প্রধান গেটসহ সব ক্লাসরুমে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িত ওই বহিরাগতকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।
এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিয়ে কলেজ প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় এক ছাত্রী ইফতার কিনে হোস্টেলে ফিরছিলেন। এ সময় ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে এক যুবক জাপটে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় ছাত্রী চিৎকার দিলেও কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি। এই সুযোগে ওই বখাটে পালিয়ে যায়। ওই সময় গেটে কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিল না। বিষয়টি জানাজানি হলে রাতেই হোস্টেল সুপার নাহিদা আক্তারকে এবং কলেজ অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনকে অবহিত করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কথা বললে ফুঁসে ওঠেন তারা।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রী হোস্টেলের দারোয়ান রাজাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মারধর করলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বহিরাগতকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার দাবিতে সকাল ১০টা থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবিরসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান।
আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার অভাবে প্রায়ই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেও নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বহিরাগত ঠেকানো যাচ্ছে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে ক্লাসে ফিরবে না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবিগুলো হলো- বহিরাগত ওই যুবককে দ্রুত গ্রেফতার, কলেজ হোস্টেলের গেটে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাকর্মী, ছাত্রী হোস্টেলের গেটসহ পুরো ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পর্যাপ্ত আনসার নিয়োগ ও পুলিশি টহল বাড়ানো।
এরই মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় বসে কলেজ প্রশাসন।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছেছে। কলেজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজ প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বখাটেকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে দায়িত্ব পালনে অবহেলায় কারণে নিরাপত্তাকর্মী সেলিম ও ফিরুজাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এএম/আরআইপি