২০ লাখ টাকা দিয়ে জেল খেটে সাগরে ডুবে গেল তারা
লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলবর্তী ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে সুনামগঞ্জের দুই যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার মধ্যরাতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
নিহতরা হলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ নতুনপাড়া ইউনিয়নের নুরুল্লাহপুর গ্রামের মো. আজির উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিন (২২) ও দিরাই উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে মাহবুবুল করিম (২৫)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাজিম উদ্দিন সিলেটের মদন মোহন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পরিবারের চার ভাই বোনের মধ্যে বড় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের ২৩ মে লিবিয়া যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। দালাল শামীম আহমেদের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন তিনি। তাকে প্রথমে লিবিয়ায় কয়েকমাস জেল খাটতে হয়। জেলে থাকা পর ৯ মে লিবিয়ার জুয়ারা শহর থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। এর মধ্যে গভীর সাগরে যখন তাদের বড় নৌকা থেকে ছোট নৌকায় তোলা হয় কিছুক্ষণ পরই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মুখে নৌকাটি ডুবে যায়।
নাজিমের চাচা শাহিন আহমেদ জানান, নাজিম উদ্দিন আমার ভাতিজা। সে দালাল শামীম আহমেদের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। সেখানে গিয়ে সে জেলও খেটেছে। দালালের সঙ্গে ৮ লাখ টাকার কথা হলেও তার কাছ থেকে ইতালি যাওয়ার আগেই ১০ লাখ টাকা নিয়ে যায়। টাকা দিলেও আমার ভাতিজার স্বপ্ন পূরণ হলো না।
অন্যদিকে মাহবুবুল করিমও ঠিক নাজিমের মতোই স্বপ্ন পূরণের জন্য লিবিয়ায় রওনা দেন ২০১৮ সালের রমজান মাসে। পরিবারের সাত ভাই তিন বোনের সংসারের তিনি ছিলেন তৃতীয়। মাহবুবুল করিমও বিশ্বনাথ উপজেলার বৈরাগি বাজারের দালাল পারভেজ মিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া এবং লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার চুক্তিবদ্ধ হন।
মাহবুবুল করিমের বড় ভাই রেজাউল করিম বলেন, আমার ভাই মাদরাসা শিক্ষার্থী ছিল। সে দালাল পারভেজের মাধ্যমে লিভিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। আমি প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে জানতে পারি আমার ভাই পৌঁছায়নি। আমাকে দালাল পারভেজ জানিয়েছে আমার ভাই নাকি ইতালি পৌঁছেছে। কিন্তু এখন শুনছি সে নৌকা ডুবে মারা গেছে।
রোববার মধ্যরাত থেকে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে সুনামগঞ্জের তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তদন্তে জানা যায় দুইজন। যখন রেডক্রিসেন্ট তালিকা তৈরি করে ওই সময় একজনের নাম দুইবার চলে আসে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইউনিট লেভেল অফিসার কনিকা তালুকদার বলেন, প্রথমে আমাদের কাছে তিনজনের নাম দেয়া হলেও এখানে মাহবুবুল নামটি দুইবার চলে আসে। আমরা যখন তদন্ত করি ও খোঁজ নিই তখন শুধু একজন মাহবুবুলের তথ্য পাই। পরে আমাদের রেড ক্রিসেন্ট থেকে জানানো হয় মাহবুবুল একজনই, তার নাম দুইবার চলে এসেছে। সে নৌকা ডুবিতে মারা গেছে।
মোসাইদ রাহাত/এএম/পিআর